Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: এসপি-কে ভর্ৎসনা, সরব বিরোধীরা

পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে-কে কার্যত ভর্ৎসনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৪৫
Share:

প্রশাসনিক বৈঠকে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে। ছবি: সুমন বল্লভ।

শিল্পশহর হলদিয়ায় শাসকদল তৃণমূলের দুই শ্রমিক নেতার গ্রেফতারি ঘিরে সম্প্রতি তোলপাড় হয়েছিল জেলার রাজনৈতিক মহল। এক দিনের মধ্যেই তাঁরা জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন ঠিকই। তবে ওই ঘটনার রেশ যে এখনও মিলিয়ে যায়নি, তার প্রমাণ মিলল বৃহস্পতিবার— মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক মূল্যায়ন বৈঠকে। এ দিন ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করেই পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে-কে কার্যত ভর্ৎসনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, কাজের ব্যাপারে প্রশংসা করে তুলনা টেনেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির সঙ্গে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শোরগোল।

এ দিন নেতাজি ইন্ডোরে প্রশাসনিক বৈঠক ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। মমতা সেখানে পুলিশ সুপারকে বলেন, ‘‘তোমার জেলা সম্পর্কে অভিযোগ পাচ্ছি। কাউকে সাজিয়ে পরিকল্পিত ভাবে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেকদিন তোমাদের বলেছি। তোমরা কিছু করনি। তারপর আমি হস্তক্ষেপ করেছি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ভাল ভাবে কাজ করবে বলেই তোমাকে ওখানে দিয়েছিলাম। কিন্তু অভিযোগ পাচ্ছি। হলদিয়াতেও পেলাম। আমাকে বাধ্য হয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করাতে হল। তোমরা থাকতে আমাকে কেন হস্তক্ষেপ করতে হবে?’’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে কার্যত নিরুত্তর ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার। তবে মমতা এখানেই থামেননি। তিনি বলেন, ‘‘ওই জেলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে নীরব। কোনও কোনও পলিটিক্যাল লিডার পিছন থেকে ইন্ধন দেয়, তাই দাঙ্গা হয়। সুতরাং এটা তোমাকে কড়া ভাবে দেখতে হবে।’’

রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ‘পলিটিক্যাল লিডার’ বলতে নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে বোঝাতে চেয়েছেন। কারণ, এ দিন তিনি পুলিশ সুপারের কাছে জানতেও চান, ‘‘তোমার কি ওখানে কাজ করতে ভয় করছে? তোমাকে কি রাজ্যপাল ফোন-টোন করেন? তুমি যদি মনে কর, তোমার ওখানে কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ছ, আমাকে সরাসরি বলতে পার।’’ উল্লেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুর অধিকারী গড় হিসাবেই পরিচিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও এবার বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে হারিয়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু। আর তৃণমূল সবদিনই অভিযোগ করেছে, বাংলার রাজ্যপাল বিজেপির পক্ষে কথা বলেন।

রাজনৈতিক অশান্তি প্রসঙ্গে মমতার প্রশ্ন শুনে এ দিন পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘‘আমরা তদন্ত করে পদক্ষেপ নিয়েছি ম্যাডাম। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছি।’’ এর পরেই মমতা জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির উদাহরণ দিয়ে পুলিশ সুপারকে বলেন, ‘‘পূর্ণেন্দু তো কাজ করছে। ওকে দেখে শেখো!’’

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন অমরনাথ কে। আগে তিনি ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের নর্থ জোনের হেড কোয়ার্টারের ডিসি ছিলেন। তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার পরে ভোট পরবর্তী সময়ে উত্তপ্ত হয়েছে নন্দীগ্রাম, খেজুরি, ময়নার বাকচার মতো একাধিক এলাকা। নন্দীগ্রাম এবং খেজুরিতে এই সংক্রান্ত ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এবং এনআইএ-ও করছে। আর ভোট মেটার এত দিন পরেও উত্তেজনা শান্ত হয়নি বাকচা এলাকায়।

Advertisement

অন্যদিকে, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে কারখানার গেট দখলের রাজনীতি এবং শ্রমিক বিক্ষোভ বন্ধে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও উঠেছে। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এই বিষয়গুলিও মমতার ভর্ৎসনা করার অন্যতম কারণ।

মুখ্যমন্ত্রীর এমন সমালোচনার বিষয়টির প্রতিবাদ করছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপি নেতা নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘এসপি-কে তৃণমূলের হয়ে কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই অফিসারেরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাজ করেন। তৃণমূল তাঁদের বেতন দেয় না।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘বাম আমলে মুখ্যমন্ত্রী কোনও আধিকারিকের কাজকর্ম নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ থাকলে তাঁকে একান্ত ডেকে নিয়ে সে কথা বলতেন। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা কাম্য নয়।’’ আর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মানসকর মহাপাত্রের কথায়, ‘‘পুলিশ সুপারের কাজ করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে তিনি রাজ্যের ডিজিকে জানাতে পারবেন। ওঁকে শুধু রাজনৈতিক চাপে রাখতেই মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা চালাচ্ছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement