Soumyadip Jana

জঙ্গি বুলেটে জখম সৌম্যদীপের লড়াইকে কুর্নিশ আজ

দু’বছর আগে জম্মুর সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার সময় মা ও বোনকে বাঁচাতে গিয়ে বুলেটের আঘাতে মারাত্মক জখম হয় সৌম্যদীপ।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

চণ্ডীপুর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১১
Share:

মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে সৌম্যদীপ।

মাথায় ও ফুসফুসে বিঁধে জঙ্গিদের বুলেটের টুকরো। শরীরের বাঁদিক অসাড়। চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। ক্ষীণ শ্রবণশক্তিও। দু’পায়ের বদলে চলাচল হুইল চেয়ারে। তবুও অদম্য বছর পনেরোর কিশোর। হার না মানার সেই লড়াই ও সাহসিকতার পুরস্কার হিসাবে ‘প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল শক্তি পুরস্কার’ পাচ্ছে সৌম্যদীপ জানা। আজ, বুধবার রাষ্ট্রপতি ভবনে ওই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে তার হাতে।

Advertisement

দু’বছর আগে জম্মুর সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার সময় মা ও বোনকে বাঁচাতে গিয়ে বুলেটের আঘাতে মারাত্মক জখম হয় সৌম্যদীপ। বাবা হরিপদ জানা সেনা বাহিনীর জওয়ান। জম্মুর সেনাঘাঁটিতে বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে থাকত সৌম্যদীপ। পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর থানার দলবাড় গ্রামে বাড়ি সৌম্যদীপের পরিবারের। সৌম্যদীপের দাদু চিত্তরঞ্জন জানাও ভারতীয় সেনা বাহিনীতে ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। বাবা হরিপদও সেনাবাহিনীতে যোগ দেন স্নাতক হওয়ার পরে।

২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ভোরে জম্মুর ওই সেনাঘাটিতে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। হামলার সময় সেনাদের পরিবারের আবাসনেও আক্রমণ চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন এক সেনা অফিসার ও এক সুবেদার। হামলার সময়ে মা ও বোনের সঙ্গে বাড়িতেই ছিল সৌম্যদীপ। বিপদ বুঝে সে মা ও বোনকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর কিছু আসবাব ও লোহার সিন্দুক টেনে দরজার সামনে ঠেস দিয়ে তার উপর বসে পড়ে। কিন্তু তার মধ্যেই জঙ্গিরা বুলেট ছুড়ে সদর দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে। ঘরের দরজা ধাক্কা দিয়ে খোলার চেষ্টা করে না পেরে গ্রেনেড ছোড়ে ও গুলি চালায়। মাথায় ও শরীরে গুলির সপ্লিন্টার গেঁথে মারাত্মক আহত হয় সৌম্যদীপ। সেই সময় সে আর্মি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। ঘটনার পর সৌম্যদীপের হাঁটাচলা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শরীরের বাঁ দিক অসাড়। দিল্লিতে সেনা হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা চলছে তার। কিন্তু লড়াই ছাড়েনি সৌম্যদীপ। বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে এখন দিল্লিতে সেনা ক্যান্টনমেন্টে থাকে। বাবা হরিপদ বলেন, ‘‘ছেলে অঙ্কে খুবই ভাল ছিল। ভাল ব্যাডমিন্টন ও ফুটবল খেলত। কিন্তু এখন স্কুলে যেতে পারে না। বাড়িতে ল্যাপটপে বড় অক্ষরের সাহায্যে কিছুটা পড়াশোনা করে।’’

Advertisement

ছেলের পুরস্কার প্রাপ্তির খবরে খুশি বাবা বলেন, ‘‘ওর এমন অবস্থার জন্য আমরা খুব ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু ওর মনের জোরে আমরাও মনোবল ফিরে পেয়েছি।’’

মঙ্গলবার গ্রামের বাড়িতে সৌম্যদীপের বড় জেঠা মধুসূদন জানা বলেন, ‘‘ওর লড়াই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুশি। আজই, বিকেলে ফোন করে পুরস্কার নেওয়ার অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আমায় ডেকেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement