সরকার দেবে টাকা, পুজোয় চাই লোকশিল্পী

কেউ চাইছেন ছৌ নাচের দল, কারও পছন্দ ঝুমুর, কারও বা বাউল গান। জেলা তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যা মজুমদার মানছেন, “এ বার প্রচুর পুজোর উদ্যোক্তা লোকশিল্পী চেয়ে আবেদন করেছেন। আগে কখনও এত আবেদন আসেনি।”

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৮
Share:

ছৌ, ঝুমুর বা বাউল গান— জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকশিল্পের কদর বরাবরই। তবে পুজোর জলসায় এত দিন চাহিদা বেশি থাকত আধুনিক গান, ফিল্মি গান বা বাংলা ব্যান্ডের। এ বার অন্য ছবি। বেশিরভাগ পুজো কমিটিই লোকশিল্পীদের অনুষ্ঠান করছে। আর সে জন্য আবেদনের পাহাড় জমেছে জেলার তথ্য-সংস্কৃতি দফতরে।

Advertisement

জেলা তথ্য-সংস্কৃতি দফতর সূত্রে খবর, প্রায় দু’শো আবেদন জমা পড়েছে। অথচ, এর আগে পুজোর সময় কখনও দশটি, কখনও বা কুড়িটি আবেদন এসেছে। কেউ চাইছেন ছৌ নাচের দল, কারও পছন্দ ঝুমুর, কারও বা বাউল গান। জেলা তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যা মজুমদার মানছেন, “এ বার প্রচুর পুজোর উদ্যোক্তা লোকশিল্পী চেয়ে আবেদন করেছেন। আগে কখনও এত আবেদন আসেনি।”

লোকশিল্পীদের এত চাহিদা কেন?

Advertisement

বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতি টানের পাশাপাশি নিখরচায় শিল্পী মিলবে বলেই সকলে লোকশিল্পের অনুষ্ঠানে ঝুঁকছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চালু হয়েছে লোকপ্রসার প্রকল্প। এই প্রকল্পে নথিভুক্ত লোকশিল্পীরা শিল্পীরা মাসে এক হাজার টাকা ভাতা পান। সরকারি নির্দেশে কোথাও গেলে অনুষ্ঠান পিছু এক হাজার টাকা মেলে। পুজোর অনুষ্ঠানেও এই নিয়ম খাটবে। ফলে, উদ্যোক্তাদের আলাদা করে টাকা খরচ হবে না। কেশপুরের এক পুজোর কর্তা মানছেন, “লোকপ্রসারের শিল্পী এলে তাঁর পারিশ্রমিক আমাদের দিতে হয় না, সরকারই দেয়। চাঁদা তুলে কষ্ট করেই পুজো করতে হয়। তাই একদিনের অনুষ্ঠানের খরচ বেঁচে যাওয়াটা কম নয়।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকপ্রসারশিল্প প্রকল্পে নথিভুক্ত শিল্পীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। জেলা তথ্য-সংস্কৃতি দফতর সূত্রে খবর, পুজোর অনুষ্ঠানে সব থেকে বেশি আর্জি এসেছে ছৌ নাচের। যদিও এই জেলায় ছৌ নাচের দল হাতেগোনা। দফতরের এক আধিকারিক বললেন, “উদ্যোক্তাদের বুঝিয়ে বলছি যে ছৌয়ের দল বেশি জায়গায় পাঠানো সম্ভব নয়। বাকি জায়গায় ঝুমুর কিংবা বাউল গানের দল যাবে।”

পুজোর সময় অনুষ্ঠানের ডাক পেয়ে লোকশিল্পীরাও খুশি। ঝুমুর গানের দল রয়েছে পানমনি সরেনের। এ বার পুজোর চারদিনই তিনি অনুষ্ঠান করবেন। তার মধ্যে একদিন আবার কলকাতার নিউটাউনে। পানমনি বলছিলেন, “ষষ্ঠী থেকে নবমী, চার দিনে চারটে পুজোয় যাবো। আরও অনেক পুজো থেকে ডাক এসেছিল। কিন্তু এক সন্ধ্যায় একটির বেশি অনুষ্ঠান করা তো সম্ভব নয়।” ঝুমুর শিল্পী ভরতচন্দ্র মাহাতোরও বক্তব্য, “পুজোয় আমরাও অনুষ্ঠান পেয়েছি। সত্যি ভাল লাগছে।’’

জেলার তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যাদেবীর মতে, “লোকপ্রসার প্রকল্পের কথা অনেকে জানছেন। এটা ভাল দিক। সকলেরই উচিত গ্রামীণ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement