বিজেপিতে ফিরলেন দিলীপের ‘ভাই’

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বছর চুয়ান্নের সুশীল ঘোষ গত বছর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ‘অস্বস্তি’তে পড়েছিল বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:০৫
Share:

সুশীল ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ ঘোষের ‘ভাই’কে দলে নিয়েছিল তৃণমূল। গত বছর সে কথা ফলাও করে ঘোষণাও করেছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অবশেষে সেই ‘ভাই’কে দলে ফেরাল বিজেপি। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার এক বছরের মধ্যে গেরুয়া শিবিরে ফিরে এলেন সুশীল ঘোষ!

Advertisement

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বছর চুয়ান্নের সুশীল ঘোষ গত বছর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ‘অস্বস্তি’তে পড়েছিল বিজেপি। ‘অস্বস্তি’র কারণ, তৃণমূলের তরফে প্রচার করা হয়েছিল দিলীপের ‘ভাই’ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, সুশীল অবশ্য দিলীপের নিজের ভাই নন। দিলীপের বাড়ি বেলিয়াবেড়ের কুলিয়ানা গ্রামে, আর সুশীলের বাড়ি গোপীবল্লভপুরের ধানশোল গ্রামে। তবে সদগোপ সম্প্রদায়ের দু’টি পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক থাকায় দিলীপের মা’কে মাসি বলে ডাকেন সুশীল। সেই সূত্রে তৃণমূল সুশীলকে দিলীপের মাসতুতো ভাই বলে প্রচার করেছিল।

এক সময় ঝাড়গ্রাম জেলায় বিজেপি-র মুখ ছিলেন সুশীল। বিজেপি-র সাংগঠনিক ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটি গঠিত হওয়ার পরে জেলা সাধারণ সম্পাদক ও পরে জেলা সহ-সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন সুশীল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গোপীবল্লভপুর আসনে বিজেপি-র প্রার্থীও হন সুশীল। তবে তিনি হেরে গিয়েছিলেন তৃণমূলের চূড়ামণি মাহাতোর কাছে। গেরুয়া শিবির সূত্রের খবর, আদতে সঙ্ঘ পরিবার থেকে আসা সুশীল মুড়ি-মুড়কির মতো বিভিন্ন দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানোর বিষয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। এই নিয়েই জেলা নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে তাঁর সংঘাত শুরু হয়। দলের কাজে শৃঙ্খলার প্রশ্নে সঙ্ঘের অনুশাসন মানা হচ্ছে না বলে ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভও জানিয়েছি‌লেন তিনি। এর পর গত বছর জুলাইয়ে সুশীল-সহ কয়েকজন বিজেপি নেতা-কর্মীকে বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা। সেখানেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সুশীলরা।

Advertisement

সূত্রের খবর, সুশীলকে ফিরিয়ে আনার জন্য খোদ সঙ্ঘ পরিবার থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়। শেষ পর্যন্ত গত ২৯ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরে দিলীপের হাত থেকে পতাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন সুশীল। তবে সুশীলের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ফলাও করে প্রচার করেনি বিজেপি। ২১ অক্টোবর বেলিয়াবেড়ায় দিলীপ ঘোষের পদযাত্রা কর্মসূচিতে তফাতে দেখা গিয়েছিল সুশীলকে। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলে গিয়ে সম্মান পাইনি। উল্টে বিজেপি থেকে যাওয়ার জন্য সন্দেহ করা হত। ভুল করেছিলাম। দিলীপদা ভু‌ল সংশোধনের সুযোগ করে দিয়েছেন।’’ সুশীল জানান, তিনি দিলীপ ঘোষের আত্মীয় নন! তাঁর কথায়, ‘‘দিলীপদার মাকে মাসি বলে ডাকি। সেই সূত্রের দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা।’’

বিজেপি-র আরও চার নেতা-কর্মীর সঙ্গে সুশীলও গত বছর তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন জেলা তৃণমূলের কোর কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ মেনে চলতে না পারলে কেউ যদি ফিরে যান, তো যেতেই পারেন। তিনি যেই হোন না কেন!’’ সুকুমার হাঁসদা বলেন, ‘‘আমার উদ্যোগেই দিলীপ ঘোষের সম্পর্কিত ভাই সুশীলবাবু তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বিজেপিতে ফিরে গিয়েছেন এমন খবর আমার জানা নেই।’’ আর ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপি-র সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘সুশীলবাবু কোনও কারণে তৃণমূলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে বুঝতে পেরেছেন তৃণমূলে কাজ করার পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই। তাই ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement