মেলার মঞ্চে সাংসদ দিলীপ ঘোষের পাশে বিধায়ক সমরেশ দাস। এই অনুষ্ঠান থেকেই শুরু বিতর্ক। ফাইল চিত্র
সৌজন্যে শো-কজের ‘গুঁতোয়’ তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে ত্রাহি ত্রাহি রবের আঁচ পড়ল প্রশাসনের একাংশেও।
সাংস্কৃতিক মঞ্চে সৌজন্যে বিতর্কের মুখে এবার মেপে পা শুধু তৃণমূল নেতারাই ফেলছেন না। ফেলছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও একাংশ। বিতর্ক এড়াতে মেলামুখী না হওয়াটাকেই শ্রেয় মনে করছেন আমন্ত্রিত প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। কেউ আবার সরাসরি মেলা কমিটিকে চিঠি দিয়ে প্রশাসনিক কাজের ‘অজুহাতে’ মঞ্চ এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছেন।
‘এগরা সাংস্কৃতিক মঞ্চ’ নামে অরাজনৈতিক কমিটির উদ্যোগে তেত্রিশ বছর ধরে এগরা মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে। এলাকার প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি থেকে সাংস্কৃতিক সংস্থা এবং এলাকার সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এ যাবৎ মেলায় অংশগ্রহণ করে এসেছেন। এগরাবাসীর কাছে এটা ছিল সাংস্কৃতিক সৌজন্যের মিলন ক্ষেত্রে। কিন্তু ৩৪ তম এই মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ বার তাল কাটল সেই সৌজন্যের। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাস, বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন বাম কাউন্সিলর। কিন্তু তা পছন্দ হয়নি তৃণমূল নেতৃত্বের। পরিণামে বিধায়ককে শো-কজ এবং ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এমনকী ভর্ৎসনাও করা হয়েছে পুরপ্রধান ও এক কাউন্সিলরকে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিরোধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে না থাকতে দলের রাজ্যসভাপতির তরফে সমস্ত নেতা-কর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনকি নির্দেশ না হলেও এগরার মেলার ঘটনায় শাসক দলের এমন আচরণে সতর্ক প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ। যে কারণে এগরা মেলায় মহকুমা প্রশাসনে কয়েকজন আধিকারিকদের আমন্ত্রণ থাকলেও তাঁরা আসেননি। মঞ্চ বিতর্কের মধ্যে এবার মেলা আসতে মেপেজোপে পা ফেলছেন কোন কোন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর তিন দিনের মেলা হলেও এখনও পর্যন্ত আমন্ত্রিত দশ জন প্রশাসনিক আধিকারিকের মধ্যে রবিবার সন্ধ্যায় মাত্র দু’জন মেলা কমিটির সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে তাঁদের কেউই মঞ্চে উঠতে চাননি। এক মহকুমা আধিকারিক সরাসরি চিঠি দিয়ে জরুরি কাজের ‘অজুহাত’ দেখিয়ে মেলায় আসতে পারবেন না জানিয়েছেন। অথচ গত বছরেও বিভিন্ন মেলায় মহকুমা থেকে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের পরিবার নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে।
মহকুমার এক আধিকারিক অবশ্য এই সতর্কতার কথা মানতে চাননি। তিনি জানান, মেলায় যাওয়ার বিষয়ে কোনও বিতর্ক কিংবা সংশয়ের কারণ নেই। কাজের চাপে কোথাও সে ভাবে যাওয়ার সময় হচ্ছে না। সময় থাকলে অবশ্যই মেলায় যাব।’’
এগরা মেলা কমিটির সম্পাদক মৃন্ময় মিশ্র বলেন, ‘‘বিতর্কের জন্য আমন্ত্রিত প্রশাসনের আধিকারিকেরা অনেকেই আসতে চাইছেন না। তবে কয়েক জন মেলা অফিসে এসেছিলেন। অবশ্য আমাদের এই মেলা অরাজনৈতিক। তাই কোনও বিতর্ক ধোপে টেকে না। যে সব আমন্ত্রিত প্রশাসনিক আধিকারিক আসেননি পুনরায় মেলা কমিটি তাঁদের মেলায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে।’’