শেখ সুফিয়ান। —ফাইল চিত্র।
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতির পদে থেকেও পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী পদের টিকিট পাননি। গত কয়েক মাসে তাঁকে ঘিরে দলের অন্দরে একাংশ নেতারা সরহ হয়েছেন। ফলে কার্যত তৃণমূলে কোণঠাসা হচ্ছিলেন নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা শেখ সুফিয়ান। এমন আবহে লোকসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নব গঠিত রাজ্য কমিটির পদাধিকারীদের তালিকায় স্থান পেলেন সুফিয়ান। ‘ক্ষুব্ধ’ ওই নেতাকে এভাবেই শান্ত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সোমবার তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নব গঠিত রাজ্য কমিটির পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে সেলের রাজ্য সহ-সভাপতি পদে নিযুক্ত করা হয়েছে সুফিয়ানকে। শুধু এই পদ প্রাপ্তি নয়, গত ১৮ জানুয়ারিই সুফিয়ানকে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের যুগ্ম সহ-সভাপতির পদেও নিযুক্ত করা হয়েছিল। অল্প সময়ের ব্যবধানে এই জোড়া পদপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে সুফিয়ান বলেন, ‘‘দল বরাবরই আমাকে গুরুত্ব দেয়। আমি প্রায় ২০ বছর ধরে দলের জেলা সহ-সভাপতি পদে ছিলাম। এবার আমাকে দলের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সহ-সভাপতি পদে নিযুক্ত করেছে। দল আমাকে যে দ্বায়িত্ব দিয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করব।’’
দলীয় সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন শেখ সুফিয়ান ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম বিধানসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে লড়াই করে হেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু জমি রক্ষা আন্দোলনের পর্বের মাঝেই ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বামেদের হারিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাপরিষদের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। সেবার নন্দীগ্রাম থেকে জিতে সুফিয়ান জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পদ পেয়েছিলেন। এরপর ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জেতার পরে সুফিয়ান জেলাপরিষদের সহ-সভাধিপতি পান। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে যাওয়ার পরে সুফিয়ানের ভূমিকা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। মমতার ‘নির্বাচনী এজেন্ট’ হিসেবে থাকা সুফিয়ানের উপর ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন খোদ দলনেত্রীও। এর পরেই ২০২৩ সালের পঞ্চায়েতের ভোটে জেলা পরিষদের প্রার্থী তালিকা বাদ
পড়েছিলেন সুফিয়ান।
পঞ্চায়েত ভোটে সুফিয়ান নিষ্ক্রিয় হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এবার পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রাম-১ এবং নন্দীগ্রাম-২ পঞ্চায়েত সমিতি-সহ অধিকাংশ পঞ্চায়েতই দখল করেছে বিজেপি। এমন আবহে সামনেই রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। দলীয় সূত্রের খবর, সুফিয়ানের নিষ্ক্রিয় হওয়ায় লোকসভা ভোটে তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। তাই এখন সুফিয়ানকে দলের মূল স্রোতে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের। আর সেই অঙ্কেই হয়তো প্রথমে সুফিয়ানের জোড়া পদ প্রাপ্তি!
সুফিয়ানের এই পদপ্রাপ্তির পাশাপাশি এদিন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নিযুক্ত হয়েছেন শেখ সানাউল্লাহ। তিনি আগে সংগঠনের জেলার চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। আর আগের জেলা সভাপতি আবদুস সামাদকে সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য কার্যকরী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। সুফিয়ানের নতুন পদ প্রাপ্তির বিষয়ে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘তৃণমূলে সুফিয়ানের যে আর গুরুত্ব নেই সেটা পঞ্চায়েতের ভোটে প্রার্থী করার না পরেই নন্দীগ্রামের মানুষ বুঝে গিয়েছেন। এখন তৃণমূলে যে পদ কেউ নিতে চায়নি, সুফিয়ানকে সেই পদ দেওয়া হয়েছে। আর এরফলে নন্দীগ্রামের সংখ্যালঘু মানুষ তৃণমূল থেকে আরও সরে যাবেন।’’