সিপিএমে যোগ পরিযায়ী শ্রমিকদের। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনে ভিন্ রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করেছে সিপিএম। তাই লকডাউন কিছুটা শিথিল হতেই সিপিএমের মিছিলে হাঁটলেন খেজুরির বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক। এঁদের মধ্যে একজন এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ‘ঘাসফুলের দুর্গ’ বলে পরিচিত খেজুরির এমন ঘটনায় জেলা রাজনীতিতে শোরগোল পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শেখ হানিফ-সহ খেজুরি-১ ব্লকের নীচ কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের মেইদিনগরের ছ’জন যুবক কেরলে হোটেলের কাজ করতে গিয়েছিলেন। লকডাউনে তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেননি। এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘ট্রেন চলছে ভেবে কেরল থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ভেলোরে এক সপ্তাহের বেশি আটকে গিয়েছিলাম। ঘরের কাছের তৃণমূলের স্থানীয় নেতা এবং বিধায়কদের ফোন করেছি। কিন্তু কোনও সাহায্য মেলেনি। পরে এলাকার এক সিপিএম নেতার মাধ্যমে কথাবার্তা হয়। তাঁরা হোটেলে থাকা এবং খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। পরে সিপিএম নেতাদের সুপারিশে গত ১২ মে বাড়িতে ফিরেছি।’’
স্থানীয় একটি কোয়রান্টিন কেন্দ্রে থাকার কয়েকদিন থাকার সময় আমপান ঝড়ে হানিফ-সহ বাকিদের ঘর ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে। তখনও শাসক দলের কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বাকিরা রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় না হলেও, হানিফ এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। সাংগঠনিক কাজেও জড়িত থাকত। অথচ গত ১০ জুন হানিফের নেতৃত্বে বাকি শ্রমিকরা কলাগেছিয়ায় সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে হাজির হন। সেখানে তাঁরা সিপিএমে যোগ দেন। পরের দিন সিপিএমের স্থানীয় বিডিও অফিসে স্মারকলিপি জমা দেওয়া কর্মসূচি ছিল সিপিএমে’র। সেখানেও সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় হানিফ-সহ বাকি পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিককে।
একসময় তৃণমূল করা হানিফ কেন সিপিএমে যোগ দিলেন? প্রশ্ন শুনে ওই যুবকের দাবি, ‘‘দুর্দিনে দলকে পাশে পাইনি। তাছাড়া এলাকায় ওঁরা উন্নয়নের নামে স্বজনপোষণ করছেন। ত্রাণ নিয়ে দলবাজি করছে। তাই বাধ্য হয়ে যারা পাশে দাঁড়িয়েছে, সেই সিপিএমে আমরা যোগ দিয়েছি।’’ এ ব্যাপারে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাস বলেন, ‘‘শাসকদল স্বার্থসিদ্ধির জন্য হানিফের মত ছেলেদের ব্যবহার করেছিল। এখন তাঁরা সত্যি উপলব্ধি করতে পেরে আমাদের দলে নাম লিখিয়েছেন।’’
পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরে এভাবে সিপিএমে যোগ দেওয়ায় কটাক্ষ করেছেন এলাকার বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আমাদের দলে থাকার ওঁদের সুবাদে সব কিছুই পাওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই অন্য দলের ব্যানারে গিয়ে এবার যাতে আরও কিছু পেতে পারেন, সে জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন। খেজুরি বিধানসভা এলাকায় ছ’হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে আমরাই দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি ফিরিয়েছি।’’