শূন্য: খড়্গপুর টাউন থানায় এই চেয়ারে বসেই কাজ করতেন উত্তম দে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
হাসপাতালে থিকথিক করছে পুলিশ। বাইরে সাধারণ মানুষের ভিড়। একে-একে জড়ো হচ্ছেন শাসক ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী। সকলেই ছুটে এসেছেন থানার মেজবাবুকে একবার শেষ দেখা দেখতে। বৃহস্পতিবার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে এমন ছবিই ধরা পড়ল। টাউন থানার মেজবাবু সাব-ইনস্পেক্টর উত্তম দে(৫৯)-এর মৃত্যু মিলিয়ে দিয়ে গেল শাসক-বিরোধীকে।
সহকর্মী সাব-ইনস্পেকটরের হাতে থাকা সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি ছিটকে মৃত্যু হয় উত্তমবাবুর। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়েই হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছিলেন শহরের বহু মানুষ। এসেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, জেলা নেতা জহরলাল পাল, কংগ্রেসের জেলা নেত্রী হেমা চৌবে, সিপিএমের নেতা অনিল দাস, বিজেপি কাউন্সিলর অনুশ্রী বেহেরা প্রমুখ। সকলেরই মনেই প্রশ্ন, এমন ঘটনা ঘটল কীভাবে? সকলেরই দাবি, পুলিশের সাব-ইনস্পেকটর হিসাবে কাজের বাইরেও সুসম্পর্ক রাখতেন উত্তমবাবু। পুরপ্রধান প্রদীপবাবু বলছেন, “উত্তমবাবু মনের দিক থেকে ভাল ছিলেন। থানায় গেলেই হাসি-মজা করেই কথা বলতেন। খুব দুঃখজনক ঘটনা।” কংগ্রেস নেত্রী হেমা চৌবে বলেন, “উত্তমবাবু মানুষ হিসাবে ভাল ছিলেন। তাই শেষ দেখা করতে এসেছি। পুলিশ বিষয়টি দুর্ঘটনা বললেও থানার মধ্যে এমন ঘটনা আমাদের ভাবাচ্ছে।”
উত্তমবাবু পরিবার নিয়ে থাকতেন মেদিনীপুরে পুলিশ কোয়ার্টারে। এ দিন ঘটনার খবর শুনে ছুটে এসেছিলেন স্ত্রী পূর্ণিমা দে, ছেলে সাগ্নিক দে, মেয়ে সমনিতা দে ও শাশুড়ি আনন্দময়ী ভুঁই। যাঁর হাতে থাকা সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি ছিটকে উত্তমবাবুর মৃত্যু হয়েছে সেই সাব-ইনস্পেকটর দেবাশিস দাস ভর্তি ছিলেন হাসপাতালের দোতলায় ট্রমা কেয়ার ইউনিটে। তিনি এমন ঘটনার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে পুলিশের দাবি। তবে এ দিন উপরে গিয়ে দেবাশিস দাসের সঙ্গে উত্তমবাবুর পরিজনেদের কথা বলতে দেখা যায়নি। কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সমনিতা বেশি কথা বলতে চাননি। তবে উত্তমবাবুর ছেলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাগ্নিক দে বলেন, “বুধবারও তো বাবা বাড়িতে গিয়েছিল। বাবার মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছি না।” স্বামীর মৃত্যু প্রসঙ্গে স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী বলেন, “সকাল ৯টা নাগাদ ফোনে কথা হয়েছিল শেষবার। উনি তো সবসময় অফিসেই থাকতেন।”
এ দিন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া হাসপাতালে উত্তমবাবুর পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ সুপার বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর জন্য যে ক্ষতিপূরণ তা পাবেন। তাছাড়া ওঁর ওপর নির্ভরশীল একজন চাকরি পাবেন। আমরা ওঁর পরিবারের
সঙ্গে রয়েছি।”