INternal Conflict in TMC

শাসকের প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্ব, সূর্যাস্তে সুর সপ্তমে বিরোধী দলনেতার

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই সাকুল্যে নেতাইয়ে ছিলেন এক ঘণ্টারও কম সময়। কিন্তু তার আগে তিনি ছিলেন তৃণমূল নেতাদের কটাক্ষে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

নেতাই শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৪
Share:

নেতাই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভা স্থলে তৃণমূলের পতাকা । নিজস্ব চিত্র

পলিটিক্যাল সান ডে-তে ত্র্যহস্পর্শ। ব্রিগেডে লাল। ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শহর ও লাগোয়া শহরতলি থেকে অনেক দূরে লালমাটির নেতাইয়ে তৃণমূল ও বিজেপির (পড়ুন শুভেন্দু অধিকারী) জোড়া কর্মসূচি। রবিবার নেতাইয়ে তৈরি হল কিছু ছবি। সে ছবি উস্কে দিল প্রশ্ন আর জল্পনা।

Advertisement

আরও কয়েকঘণ্টা পরে অভিষেক নিজের গড়ে দাঁড়িয়ে উড়িয়ে দেবেন প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্ব। কিন্তু সকালেই নেতাইয়ের মঞ্চে তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শহিদবেদিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি ফুলের স্তবক দিলেন।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই সাকুল্যে নেতাইয়ে ছিলেন এক ঘণ্টারও কম সময়। কিন্তু তার আগে তিনি ছিলেন তৃণমূল নেতাদের কটাক্ষে। বিজেপিতে যোগ দেওয়া ইস্তক যে ‘গদ্দার’ বিশেষণ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে। তবে সশরীরে উপস্থিত না থেকেও নেতাইয়ে আগাগোড়া রইলেন শুভেন্দু। সংকীর্তন রায়। নেতাই-কাণ্ডে গুলিতে আহতদের অন্যতম। এ দিন তাঁর আত্মীয়কে সকালে তৃণমূলের কর্মসূচিতে দেখা গেলেও সংকীর্তনের খোঁজ মিলছিল না। শুভেন্দু ‘শহিদ’ স্মরণ সেরে সটান পৌঁছন সংকীর্তনের বাড়ি। সেখান রীতিমতো আসন পেতে খেতে দেখা যায় শুভেন্দুকে। রাখঢাক না রেখে সংকীর্তনও বলে ফেলেন, ‘‘শুভেন্দুদার জন্য আয়োজনে সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলাম।’’

Advertisement

প্রত্যাশিত ভাবেই আরও একটা ঘটনা ঘটল নেতাইয়ে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাইয়ের ঘটনায় চার মহিলা সহ ৯ গ্রামবাসীর মৃত্যুর পর নেতাই গ্রামের বটতলা চকে ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি শুভেন্দুর উদ্যোগে শহিদ বেদি তৈরি হয়েছিল। নেতাইয়ের ক্ষোভের ক্ষতের আঁচ আগেই পেয়েই তৃণমূল। শুভেন্দুর ব্যক্তিগত অর্থে তৈরি শহিদ বেদির পাশেই এতদিন মঞ্চ বেঁধে শহিদ স্মরণ সভাটি হত। যেখানে প্রতিবছর সভা হতো সেই জায়গাটি যাঁর তিনি এ বার অনুমতি না দেওয়ায় সভামঞ্চ করা হয়েছিল বেদির উল্টোদিকের ফাঁকা জায়গায়। শুভেন্দু কিন্তু শহিদ স্মরণ করেছেন নির্দিষ্ট জায়গাতেই।

লালগড়ের নেতাই গ্রামটি ঝাড়গ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত। ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা নেতাই দিবসের স্মরণ সভা সফল করার জন্য ‘শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটি’র (অরাজনৈতিক এই কমিটিই নেতাই দিবস পালন করে) সঙ্গে বার কয়েক বৈঠক করেছিলেন। সকাল ৮টার সময় সভা শুরু কথা থাকলেও সকাল দশটা পর্যন্ত মঞ্চ চত্বর সুনসান ছিল। সাড়ে দশটা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের নেতা-নেত্রী ও জনপ্রতিনিধিরা একে একে এসে পৌঁছন। অভিযোগ, তৃণমূলের সভায় বাইরে থেকে লোক আনা হয়েছিল। তবে অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বলেন, ‘‘শীতের দিনে প্রচুর ভিড় হয়েছে। যারা বলছেন এমন কথা তাঁরা বিজেপির চোখ দিয়ে দেখছেন।’’ শুভেন্দুকে এক হাত নিয়ে কল্যাণ বলেন, ‘‘গদ্দার কখনও শহিদদের সম্মান দিতে পারে না। দৌড়ে দৌড়ে কোর্টে যায়। আপনি থাকুন কোর্টে। আমরা থাকি ভোটে।’’

এ বার আদালতের নির্দেশ ছিল, বিকেল ৫টায় একঘণ্টার জন্য নেতাইয়ে আসতে পারবেন শুভেন্দু। তবে আদালত নির্দেশে জানিয়েছিল, কোনও পক্ষই (নেতাই স্মৃতিরক্ষা কমিটি, বিজেপি) কোনও রাজনৈতিক স্লোগান দিতে পারবে না। তবে দুপুরে নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভায় ঝাড়গ্রামের শিল্পীরা তৃণমূলের দলীয় গান গেয়েছেন। মঞ্চের ব্যাক ড্রপে প্রতিবারের মতো এবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিল। সভায় আগত লোকজনের হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকাও ছিল। সভার শেষপর্বে নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি নন্তু অধিকারীকে তাঁর বক্তৃতা শেষে মমতা ও অভিষেকের নাম করে জিন্দাবাদ ধ্বনিও দিতে দেখা গিয়েছে।

বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিশাল কনভয় নিয়ে নেতাই গ্রামে পৌঁছন শুভেন্দু। নেতাই শহিদ বেদি গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে রুমাল দিয়ে মোছার পর শহিদ বেদিতে ফুলের স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে ধুপ দিয়ে বেদি আরতি করেন তিনি। ওই সময় উপচে পড়েছিল স্থানীয়দের ভিড়। মোমবাতি জ্বেলে বেদি প্রদক্ষিণের পর বেদির পাশে নিহতদের পরিজন ও আহতদের হাতে শাল ও অর্থ সাহায্য তুলে দেন। গুলিতে জখম নব ঘাটার ছেলে সৌরভ কিডনির অসুখে ভুগছেন। ছেলের চিকিৎসার জন্য শুভেন্দুর কাছে আর্জি জানান নবঘাটার স্ত্রী মালতি। শুভেন্দু আশ্বস্ত করেন তাঁকে। সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ শুভেন্দু ফিরে গিয়ে লালগড়ের হাটতলা থেকে এসআইচক পর্যন্ত শহিদ স্মরণে মোমবাতি নিয়ে পদযাত্রা করেন। এরপর সংবাদমাধ্যমকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘৬১ টা গাড়ি ভাড়া করে ওরা ২৩০ জন লোককে আনতে পেরেছিল। ওদের সঙ্গে মানুষ নেই।’’ মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলছেন, ‘‘উনি (শুভেন্দু) মনে হয় কান দিয়ে দেখেন। তাই হাজার হাজার লোকজনকে দেখে ওনার শ’দুয়েক মনে হয়। হাসপাতালে নব ঘাটার ছেলের নিয়মিত ডায়ালিসিস করানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তারপরও অসুস্থকে নিয়েও নোংরা রাজনীতি করা হচ্ছে।’’

নেতারা এলেন-গেলেন। নেতাই উচ্ছ্বাস দেখাল বিরোধী দলনেতাকে দেখেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement