দিঘার উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা। কিন্তু সৈকতের পরিবেশের কী হাল! পরিষেবার হালই বা কী!
Digha

চোখ ঢেকে যায় নির্মাণে

২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল ঘটার পর দিঘাকে নববূপে সাজিয়ে তোলার ভাবনা শুরু হয়। দিঘাকে যে তিনি গোয়ার মতো করে সাজাতে চান তা জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দিঘা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৩
Share:

পুরীর ধাঁচে নয়া রূপ পাবে দিঘার জগন্নাথ মন্দির। পরিবেশ বাঁচিয়ে কি সেই নির্মাণ সম্ভব, উঠেছে প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র

দিঘা: দিঘা বললেই এক সময় চোখের সামনে ভাসত একদিকে বিস্তৃত বালিয়াড়ি, আর এক দিকে বিশাল সৈকত। বিস্তৃত সেই বালিয়াড়ি ভরে থাকত ঝাউয়ের ঘন জঙ্গলে। সৈকত আর বালিয়াড়ির মাঝে ইতস্তত কিছু হোটেল। তবে সে সব আজ অতীত। উন্নয়নের জাদুকাঠির ছোঁয়ায় আগাগোড়া নতুন রূপ পেয়েছে দিঘা। তা নিয়ে যেমন প্রশংসাও রয়েছে। তেমনই বিতর্কও রয়েছে। আর সেই বিতর্ক যাকে ঘিরে বেশি চর্চা পেয়েছে তা হল সৈকত শহরের পরিবেশ।

Advertisement

২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল ঘটার পর দিঘাকে নববূপে সাজিয়ে তোলার ভাবনা শুরু হয়। দিঘাকে যে তিনি গোয়ার মতো করে সাজাতে চান তা জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর হাত ধরে শুরু হয় দিঘার সৌন্দর্যায়ন। বদল ঘটতে শুরু করে পরিকাঠামোর ক্ষেত্রেও। আর সেই কর্মযজ্ঞের শুরু থেকেই বার বার পরিবেশের বিষয়টি সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সৈকত এলাকায় কোনও রকম নির্মাণকাজে পরিবেশবিধি যথাযথ ভাবে রক্ষা করা হচ্ছে কি না তা নিয়ে। পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে দিঘাকে আরও আকর্ষণীয় করতে বিনোদনের নানা ব্যবস্থা, পর্যটকদের আরও সুযোগ-সুবিধা দিতে সৈকত বরাবর রাস্তা নির্মাণ, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সমুদ্রে নজরদারিতে ওয়াচ টাওয়ার তৈরি নিয়ে সরকারি উদ্যোগের প্রশংসাও হয়েছে। কিন্তু উন্নয়ন করতে গিয়ে দিঘার বিখ্যাত ঝাউবন, বালিয়াড়ি যাতে ধ্বংস না হয় সে জন্য বার বার সরব হয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। কিন্তু অভিযোগ, পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই দিঘায় নির্মাণ কাজ হয়ে চলেছে।

দীপ্তিমান মুখোপাধ্যায় নামে এক পর্যটক বলেন, ‘‘এ ভাবে বালিয়াড়ি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে একের পর এক ভবন গড়ে উঠলে দিঘার প্রকৃত সৌন্দর্য অল্প দিনেই হারিয়ে যাবে।’’ পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, নির্মাণ কাজে বালিয়াড়ি ধ্বংস করলে ভূত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আগামী দিনে দিঘায় বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামাল দেওয়া মুশকিল হতে পারে।

Advertisement

সৈকতে পড়ছে নিকাশির জল।

সপ্তাহ দেড়েক আগে জেলা সফরে এসে দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এখানে ঘোষণা করেন, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে এখানেও জগন্নাথ মন্দির তৈরি করা হবে। এরপরই ফের প্রশ্ন উঠেছে, সমুদ্রের ধার বরাবর কোনও নির্মাণ কাজে পরিবেশগত কারণে অনুমোদন না থাকায় কী ভাবে মন্দির তৈরি হবে। কারণ, উপকূল এলাকায় নির্মাণ নিয়ে য়ে আইন রয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, জোয়ারের সময় সমুদ্রের ঢেউ যতদূর গিয়ে পৌঁছয়, সেখান থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে কোনও নির্মাণ কাজ করা যাবে না। অথচ যেখানে মন্দির তৈরি হওয়ার কথা সেখানে আগে থেকেই একটি মন্দির রয়েছে। সেটিও সমুদ্র সৈকত লাগোয়া এলাকায়। তা ছাড়া মন্দিরকে ঘিরে আশপাশে ঝাউবন ও অন্যান্য গাছপালা রয়েছে। জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করতে গেলে ওই ঝাউবন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার আইন মানছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সাংসদ এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও।

যদিও প্রশাসন সূত্রে খবর, দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরির অনুমোদন চেয়ে ‘কোস্টাল রেগুলেটরি জোন’ নিয়ন্ত্রণকারী কমিটির কাছে রাজ্য সরকার চিঠি দিয়েছে। সবুজ সংকেত পেলে তবেই কাজ শুরু হবে।

শুধু নির্মাণই নয়, সৈকত শহরের আনাচে-কানাচে যে ভাবে জঞ্জাল পড়ে থাকে, দোকান-বাজারে প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়েও সরব পরিবেশপ্রেমীরা। তার উপর নিউ দিঘায় যাত্রানালা ঘাটের কাছে শহরের নোংরা জল সমুদ্রে পড়ায় সেখানে জল দূষিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

রাস্তার পাশে জমে আবর্জনা।

দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিও)-এর তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, সৈকত শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পর্যটক এবং স্থানীয়দের এধরনের জিনিস ব্যবহারের ওপর নজরদারি চালাতে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। সৈকত শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত দুবার সাফাই অভিযান হয়। ডিএসডিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সুজন কুমার দত্তর দাবি, ‘‘সৈকত শহরে বালি সরিয়ে নির্মাণ হচ্ছে, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। যেখানে এ ধরনের নির্মাণ হচ্ছে সেখানে কংক্রিটের পিলার তৈরি করে তার উপরে নির্মাণের পর নীচের ফাঁকা অংশ ফের বালি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে।’’

আর মন্দির নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় সাংসদ তথা ডিএসডিএ-র চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘যে জায়গায় জগন্নাথ মন্দির রয়েছে, ঠিক তার পিছন দিকেই নতুন মন্দির তৈরি করবে রাজ্য সরকার। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ আইন অমান্য করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠছে তা সঠিক নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement