চাঁদপুরের কাছে সমুদ্র বাঁধ বেহাল। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি শালগাছের খুঁটি। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছে বোল্ডার। এক আধবার নয়, পর পর দুবার বাঁধ তৈরি সত্ত্বেও তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ভরা বর্ষায় তাই সিঁদুরে মেঘ দেখছে শঙ্করপুর সংলগ্ন রামনগর-১ ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শঙ্করপুর থেকে তাজপুর পর্যন্ত সমুদ্র বাঁধের অবস্থা সঙ্কটজনক। জোয়ারের সময় শাল গাছের খুঁটি দিয়ে তৈরি বাঁধ ছাপিয়ে বঙ্গোপসাগরের জল জনবসতির অনেকটাই ভিতরে চলে আসে। গত কয়েক মাসে পাকাপাকিভাবে সামুদ্রিক বাঁধ তৈরি না হওয়ায় সমুদ্র যেন জনবসতির আরও কাছে চলে এসেছে। চলতি অগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে ভরা বর্ষার মরসুম চলবে। সে সময় সমুদ্র আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। ফলে স্থানীয় চাঁদপুর, তাজপুর, লছিমপুর এবং জলধা গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। তাঁদের দাবি, এমনিতেই জলোচ্ছ্বসে গ্রামে জল ঢোকে। তার উপর বাঁধ বলতে কিছুই প্রায় নেই। সমুদ্র যে ভাবে এগিয়ে আসছে তাতে এই সব গ্রাম আর কতদিন টিকে থাকবে সেটাই প্রশ্ন।
তাজপুর গ্রামের রঞ্জিত মল্লিক বলেন, ‘‘২০০৮-’১০ সাল নাগাদ পরপর দুবার সমুদ্রে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জলোচ্ছ্বাসে সেই বাঁধের ছিটেফোঁটাও নেই।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জোয়ারের ধাক্কায় বোল্ডারের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। শুধু মাত্র কয়েকটি খুঁটি রয়েছে। গত বছর নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের পর ওই সব এলাকা ঘুরে দেখেন সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সে সময় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিল এলাকার বাসিন্দারা। সেচমন্ত্রী ওই এলাকায় সমুদ্র বাঁধ দ্রুত নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। চলতি বছরে নতুন করে বোল্ডারের বাঁধ তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সেটিও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে প্রভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সুশান্ত দোলই নামে তাজপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সমুদ্র দ্রুত এগিয়ে আসছে জনবসতির দিকে। ভরা বর্ষায় একবার সমুদ্রের জল লোকালয়ে ঢুকে পড়লে চাষের জমি থেকে ভিটেমাটি সব তছনছ হয়ে যাবে।’’
সেচমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরেও কাজ শুরু না হওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। যদিও বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ শিশির অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় বিজ্ঞান সম্মত সামুদ্রিক বাঁধ তৈরি করা হবে। তার জন্য টেন্ডাররে কাজ শেষ হয়েছে। রাজ্য সরকার ৮০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ শুরু করা হবে।’’ এই অবস্থা কবে বাঁধ তৈরি হবে, সেদিকেই তাকিয়ে সমুদ্রপাড়ের গ্রামগুলির মানুষ।