স্কুলের ভিতর কেন্দ্রীয় বাহিনী। বন্ধ পঠনপাঠন। বন্ধ গেট।বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমির সামনে। নিজস্ব চিত্র
ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস রুখতে বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমি স্কুলে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় স্বস্তিতে স্থানীয়রা। এলাকাবাসী শান্তিতে থাকলেও, ঘুম উড়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের।
কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় খোলা যাচ্ছে না স্কুল। ফলে পড়ুয়াদের নির্ধারিত পাঠ্যক্রম সময়ে শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত স্কুল কর্তৃপক্ষ। কারণ, অগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন। এমন পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের তরফে স্কুল থেকে কেন্দ্র বাহিনী দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার আবেদনও উঠেছে।
বিদ্যালয় সূত্রে খবর, গত ৬ জুলাই থেকে বিদ্যালয় পঠন-পাঠন বন্ধ। ভোট মিটে যাওয়ার ন’দিন পরও স্কুলে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত। বন্ধ বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনও। কবে খুলবে স্কুল? জবাব নেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেও। নীরব প্রশাসন! ফলে আতান্তরে পড়েছে স্কুল পড়ুয়ারা। ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের বক্তব্য, ‘‘ভোট মিটে গিয়েছে। আরও কতদিন বন্ধ থাকবে স্কুল? অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরীক্ষা। সিলেবাস এখনও শেষ হয়নি।’’ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজন ষড়ঙ্গী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘খুবই অসুবিধা হচ্ছে। মানসিক ভাবে অসুস্থ লাগছে আমাদের। ভোট মিটেছে। তারপরেও স্কুলে পঠন-পাঠন বন্ধ রেখে কেন্দ্র বাহিনী কেন?’’
বিদ্যালয় জানাচ্ছে, গত ৬ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল। ওইদিন কেন্দ্র বাহিনী আসার কথা থাকলেও আসেনি। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ মতো বিদ্যালয় ছুটি দিতে হয়েছিল। তবে ৮ জুলাই ভোট চলে গেলেও আসেনি কেন্দ্রবাহিনী। ফলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্কুল খোলার বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এরপর প্রশাসন ফের বাহিনী আসার কথা জানায়। তাই বিদ্যালয় খোলা যায়নি।
এরপর গত ১১ জুলাই ভোট গণনার দিন কেন্দ্র বাহিনীর একটি দল আসে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের বক্তব্য, ‘‘অন্যান্য স্কুল খোলা। অথচ এই স্কুলের পঠন-পাঠন বন্ধ। ফলে সমস্যা হচ্ছেই।’’ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া সৌহার্দ জানা, দশম শ্রেণির পড়ুয়া সমন্বয় জানার অভিভাবক, শিক্ষক কাঞ্চন জানা বলেন, ‘‘ছেলেরা বাড়িতে পড়ছে ঠিকই। তবে প্রকৃত পড়াশোনার জন্য স্কুলের ওপর নির্ভর করতে হয়। স্কুল টানা বন্ধ মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।’’ অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে কেন কেন্দ্রবাহিনী রাখা হবে। প্রশাসন তাদের অন্য জায়গায় রাখুক। একই বক্তব্য অপর এক অভিভাবক সুজন মাইতির। তাঁর ছেলে অয়ন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘পঠন-পাঠন বন্ধ থাকলে যা হয়, তাই হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা ঘুরছে। মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে থাকছে। সামনেই পরীক্ষা। সিলেবাস শেষ হবে কি না সন্দেহ।’’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক কার্তিকচন্দ্র আচার্য বলেন, ‘‘আমরা জানি না কবে কেন্দ্র বাহিনী যাবে। কবে পঠন-পাঠন শুরু করতে পারব। চাইব দ্রুত কেন্দ্র বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়া হোক।’’ বিদ্যালয়ে যাঁদের থাকা নিয়ে এত কথা, সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাও জানি না, কতদিন থাকতে হবে। নির্দেশ এলেই চলে যাব।’’