প্রচার: সচেতনতা বাড়াতে মেদিনীপুরে পদযাত্রা। নিজস্ব চিত্র
এত দিন স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে স্কুলে স্কুলে ডেঙ্গি সচেতনতার শিবির হচ্ছিল। পড়ুয়াদের বোঝানো হচ্ছিল জমা জল, আবর্জনা, মশারি না টাঙানোর বিপদ। এ বার একটি স্কুল একেবারে নিজস্ব উদ্যোগে ডেঙ্গি সচেতনতায় পথে নামল। প্রচারগাড়ি বেরলো, পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মানুষজনকে সচেতন করল পড়ুয়ারা।
শুক্রবারের এই ছবি দেখা দেয় মেদিনীপুর শহরের বেড়বল্লভপুরে। স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভা কিংবা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য ছাড়াই বেড়বল্লভপুর প্রাথমিক স্কুলের উদ্যোগে এ দিনের কর্মসূচি হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় ভট্টাচার্য বলছিলেন, “স্কুলেরও একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই কর্মসূচি।’’ ডেঙ্গি সচেতনতার প্রচারে সামিল হতে আগেই স্কুলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বেশিরভাগ স্কুলই সে ভাবে প্রচারে নামেনি। তাই বেড়বল্লভপুর প্রাথমিক স্কুলের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তাঁর কথায়, “প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা ডেঙ্গি রোধে সামিল হয়েছে। সচেতনতা প্রচার করছে। এটা খুবই ভাল উদ্যোগ।’’
স্কুল পড়ুয়াদের উত্সাহ দিতে এ দিন বেড়বল্লভপুরে এসেছিলেন স্কুল শিক্ষা দফতরের এসআই অরুণাভ প্রহরাজ। তিনিও ডেঙ্গি রোধের প্রচারে সামিল হন। অরুণাভবাবু বলছিলেন, “এটা তো সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের একটি প্রয়াস। স্কুলের এই প্রয়াস সত্যিই প্রংশসনীয়। এমন কর্মসূচি যত বেশি হবে, তত ভাল।’’ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শেখ সাফার আলি, তৃতীয় শ্রেণির বৃষ্টি মাণ্ডি, চতুর্থ শ্রেণির রোহেনা খাতুনরা এ দিন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরেছে। ডেঙ্গি নিয়ে মানুষজনকে সচেতন করেছে। সাফার বলছিল, “আমরা কোথাও জল জমতে না দেওয়ার কথাই বলেছি।’’ বৃষ্টির সংযোজন, “সব সময় এলাকার পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেও বলেছি।’’ রোহেনার কথায়, “সবাইকে বুঝিয়েছি এলাকার পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে ডেঙ্গি হবে না।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৪৫০ ছাড়িয়েছে। বেসরকারি সূত্রের দাবি, আক্রান্ত আরও বেশি। রোগ মোকাবিলায় সচেতনতা প্রচার শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রচারের কাজে যুক্ত হয়েছে প্রশাসনও।
প্রশাসন চাইছে, স্কুলগুলো এই প্রচারে সামিল হোক। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, “মশাবাহিত রোগ নিয়ে সকলকে সচেতন হতেই হবে। স্কুলস্তর থেকে সচেতনতা গড়ে উঠলে সব দিক থেকে ভাল।’’ জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা পতঙ্গবাহী রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান জানালেন, স্কুল-কলেজে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজে ক্যুইজও হচ্ছে। বেড়বল্লভপুর প্রাথমিক স্কুলের এই উদ্যোগ সচেতনতা প্রচারের সেই প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনবে বলেই আশা। স্কুল শিক্ষা দফতরের এসআই অরুণাভ প্রহরাজ বলছিলেন, “পড়ুয়ারা পথে নামার ফলে অনেকেই সচেতন হবেন। সচেতনতাই পারে ডেঙ্গি মোকাবিলা করতে।’’