ফাইল চিত্র।
রাত পোহালেই কাঁথিতে সভা করবেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় প্রচুর সমাগমের কারণে যানজটের আশঙ্কা থেকে শনিবার বার্ষিক পরীক্ষা পিছোনোর পথে হাঁটল একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা। সরব বিরোধীরাও।
কাল শনিবার, কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজের মাঠে জনসভা। সভাস্থলের ১০০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ এবং কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষা সদন। কলেজ কর্তৃপক্ষ পঠনপাঠন চালু থাকার কথা বললেও ওই স্কুলে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। শাসকদলের ‘মেগা শো’ ঘিরে যানজটের আশঙ্কাতে পরীক্ষা পিছোনোর পথে হাঁটছেন শহরের একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষা সদনের তরফে দাবি করা হয়েছে, কয়েকদিন ধরে এমনিতেই প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের পাশাপাশি, শাসক দলের নেতাদের প্রচুর গাড়ি স্কুলের সামনে যাতায়াত করছে। জনসভার দিন সামনের ওই রাস্তা সম্পূর্ণরূপে শাসকদলের কর্মীদের দখলে থাকবে। পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই তাই এমন সিদ্ধান্ত। প্রধান শিক্ষক রাধামাধব দাস বলেন, ‘‘৩ ডিসেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা হবে না।’’ কিন্তু পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষার রুটিনে কেন বদল করা হচ্ছে? সে প্রসঙ্গে রাধামাধবের বক্তব্য, ‘‘এটা স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সংবাদ মাধ্যমকে জানানো সম্ভব নয়।’’
একই ভাবে শনিবার বার্ষিক পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার পথে হাঁটছেন কাঁথি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছন্দা শাসমল বলেন, ‘‘শহরের পাশ্ববর্তী এলাকার মেয়েরা এই স্কুলে পড়তে আসে। কাল বড় মাপের সভা হবে শুনেছি। সে ক্ষেত্রে যানবাহনের ঘাটতি হলে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্ত আমরা সকলকে জানিয়ে দেব।’’ উল্লেখ্য, কাঁথি শহর এলাকায় ছ’টি হাইস্কুল রয়েছে। সভাস্থল থেকে ওই সব স্কুলের দূরত্ব মেরে কেটে দু’কিলোমিটার। প্রতিটি স্কুলই তাদের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা বিপাকে। যদিও এখনও পর্যন্ত তারা শনিবার পরীক্ষা না হওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজেও এই দিন স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠন চলবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দে বলেন, ‘‘বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্লাস চলবে। পরিস্থিতি বিচার করে পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
এদিকে, পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ। শহরের রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা তথা এক অভিভাবক বলেন, ‘‘বুধবার নোটিস দিয়ে স্কুল জানিয়েছে ৩ ডিসেম্বরে পরীক্ষা হবে না। ওই পরীক্ষা হবে ৮ ডিসেম্বর।’’ অভিভাবকদের অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতির জন্য পরপর দু’বছর স্বাভাবিক পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। এ বছরই প্রথম বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের সভার কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই মানা যায় না।’’ ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের একাংশও। তাদের মতে রাজনৈতিক কর্মসূচি যাতে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাঘাত না ঘটায়, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। কটাক্ষ করছে বিরোধীরাও। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সভার জন্য পড়ুয়াদের পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হচ্ছে, এটা এই রাজ্য বলেই সম্ভব হচ্ছে।’’
দলীয় নেতার সভায় পঠনপাঠনে বিঘ্ন হচ্ছে, এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক তথা কারা মন্ত্রী অখিল গিরি বলছেন, ‘‘আমরাও চাই পরীক্ষা হোক। তবে শনিবার সকাল থেকে মাইক বাজবে, প্রচুর লোক আসবে। পরীক্ষার্থীদের অসুবিধে হবে। স্কুল চাইলে পরীক্ষা করাতেই পারে।’’