—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
করোনা-কালের পর ফের স্কুলে স্বাভাবিক পঠনপাঠন শুরু হতেই বেড়েছিল বাড়ি থেকে পালানোর প্রবণতা। রেলের কর্মসূচি ‘অপারেশন নান্হে ফারিস্তে’এর পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট— দীর্ঘ অনভ্যাসের পর পড়াশোনায় চাপ বাড়তেই ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল অনেকে।
বাড়ি থেকে হয় পালিয়ে না হয় হারিয়ে স্টেশন আশ্রয় নেয় অনেক নাবালক-নাবালিকা। তাদের উদ্ধারে সাত বছর আগে কর্মসূচি শুরু করে রেল। নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন নান্হে ফারিস্তে’। প্রথমবার পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। দেখা যাচ্ছে সাত বছরে দেশ জুড়ে অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৮৪ হাজার নাবালক-নাবালিকা। সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে বেশি। তবে তথ্য বিশ্লেষণে উঠে আসছে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। করোনা পূর্ববর্তী সময় থেকে এই অভিযান শুরু করা হলেও দেখা গিয়েছে করোনার সময়ে সংখ্যা কম ছিল। তবে করোনার পরে ২০২২ সালে দেশ থেকে খড়্গপুর ডিভিশনে সর্বাধিক শিশু-কিশোর উদ্ধার করা হয়েছে এই অভিযানে।
২০১৮ সালে কর্মসূচির প্রথম বছরে সারা দেশে ১৭ হাজার ১১২ জন উদ্ধার হয়েছিল। করোনা হানার পরে ২০২০ সালে সংখ্যাটা কমে হয়েছিল ৫ হাজার ১১ জন হয়েছিল। করোনা পরবর্তী-কালে ২০২২ সালে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছিল ১৭৭৫৬ জন। ওই বছর দক্ষিণ-পূর্ব রেলে উদ্ধার হওয়া শিশু কিশোরের সংখ্যা ছিল এক হাজার ২৫৮ জন। আর শুধু খড়্গপুর ডিভিশনেই ২০২২ সালে উদ্ধার হয় ২৯২ জন শিশু। বিষয়টি নিয়ে খড়্গপুর রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল সিকিউরিটি কমিশনার ওঙ্কার সিং বলেন, ‘‘যে সংখ্যক শিশু উদ্ধার হয়েছে তা অবশ্যই উদ্বেগের।’’
গত বছর থেকে সংখ্যা কমেছে। ২০২৩ সালে দেশ জুড়ে ১১ হাজার ৭৯৪ জন শিশু-কিশোর উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ৭৬৭ জন রয়েছে। খড়্গপুর রেল ডিভিশনে উদ্ধার হয়েছে ১৬৮ জন শিশু-কিশোর। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত দেশের নানা স্টেশন থেকে উদ্ধার হওয়া শিশু-কিশোরের সংখ্যা চার হাজার ৬০৭ জন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ২০২৪ সালে এখনও পর্যন্ত ২৭৬ জন শিশু-কিশোর উদ্ধার করেছে রেল সুরক্ষা বাহিনী। সেখানে খড়্গপুর ডিভিশনে গত ছ’মাসে মাত্র ৮২ জন শিশু-কিশোর উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া শিশুদের পরিবারের খোঁজ করেও না পাওয়া গেলে চাইল্ড লাইন অথবা শিশু কল্যাণ কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে খবর।
করোনা পরবর্তী-কালে ২০২২ সালে শিশু-কিশোরের উদ্ধার হওয়ার সংখ্যা বাড়লেও গত বছর থেকে সংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনে কী কারণ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে কী অভিযানে ভাটা পড়েছে? সিনিয়র ডিভিশনাল সিকিউরিটি কমিশনার বলেন, “করোনার পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পরে যখন স্কুল খুলেছে তখনই দেখা গিয়েছে শিশু-কিশোরদের মধ্যে পালানোর প্রবণতা বেড়েছিল। তাই উদ্ধারের সংখ্যাটা বেড়েছিল। কিন্তু তার পরে অভিযান ও সচেতনতা প্রচারে ক্রমে প্রবণতা অনেকটা কমেছে বলেই সংখ্যা কমছে।’’