বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের সংবিধানের মূল নীতি থেকে কি বাদ দেওয়া হবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে? সে দেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ঘিরে সেই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে। বুধবারই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সুপারিশ-সহ একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা-সহ তিনটি মূল নীতি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য চারটি মূল নীতির উল্লেখ রয়েছে— জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। হাসিনার সরকারের পতনের পর সংবিধান সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, চার মূল নীতির মধ্যে কেবল গণতন্ত্রকে রাখার সুপারিশ করেছে কমিশন। তার সঙ্গে আরও চারটি নতুন মূল নীতির সুপারিশ করা হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত পাঁচটি মূল নীতির মধ্যে রয়েছে— সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র।
এখন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চারটি মূল নীতি রয়েছে, তা গৃহীত হয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে সংবিধান রচিত হওয়ার সময়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসাবে এই পাঁচ মূল নীতির প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূল নীতি হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, জাতীয়বাদ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সংবিধানের ৮, ৯, ১০ এবং ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলি রিয়াজ় জানিয়েছেন, সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁরা গণভোটের সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের সংসদে উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষ চালুরও প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা।
যদিও এই সুপারিশগুলির প্রেক্ষিতে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, এই সুপারিশগুলি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবে। আলোচনার মাধ্যমে যে সংস্কারগুলির বিষয়ে ঐক্যমত্য হবে, সেই সংস্কারগুলি বাস্তবায়নের কথা বিবেচনা করা হবে। এ দিন সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া আরও তিনটি সংস্কার কমিশন নিজেদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ইউনূসকে। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী মাসে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবে সরকার।