প্রায় কারও মুখেই নেই মাস্ক। মঙ্গলবার কলেজ মোড়ে। নিজস্ব চিত্র।
মাসকয়েক আগেও করোনা নিয়ে উত্তাল ছিল রাজ্য রাজনীতি। পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে একে অপরকে বিঁধতে ছাড়ছিল না রাজনৈতিক দলগুলি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মেদিনীপুরে কলেজ মোড়ে সরস্বতী পুজোর ব্যঙ্গচিত্রে সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে কটাক্ষ থাকলেও গরহাজির শুধু করোনা প্রসঙ্গ।
এ বার কোনও পুজো কমিটি তাদের ব্যঙ্গচিত্রে তুলে ধরেছে দলবদলের প্রসঙ্গ। কেউবা আবার হাতিয়ার করেছে ‘টুম্পা সোনা’ গানকে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণ হোক অথবা নারদ, সারদা সবই আছে। মাইকে বেজেছে ‘খেলা হবে’ স্লোগান। ব্যঙ্গচিত্রে নেই শুধু করোনা। অথচ কলেজ মোড়ের এই পুজোর বিশেষত্বই হল সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে রাজনীতির আকচাআচকি। কমিটিগুলি ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করে। বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্রের পাশে লেখা থাকে। প্রায় প্রতিটি লেখাই কোনও না- কোনও রাজনৈতিক দলকে খোঁচা দেয়। অন্যদিকে, এখানকার বেশিরভাগ পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কোনও না- কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র- যুব সংগঠন। কোনও পুজোর নেপথ্যে থাকে টিএমসিপি বা সিপি। কোনও পুজোর নেপথ্যে থাকে এসএফআই বা এবিভিপি।
নারদ, সারদা মতো পুরনো প্রসঙ্গ এলেও কেন গরহাজির করোনার মতো সাম্প্রতিক বিষয়? বিজেপি প্রভাবিত 'জাগরণ'- এর অন্যতম উদ্যোক্তা শুভজিৎ রায় বলেন, ‘‘করোনাকে হারিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে জনজীবন। তাই আর করোনার প্রসঙ্গ রাখা হয়নি।’’ তৃণমূল প্রভাবিত ‘অগ্নিকন্যা’- র অন্যতম উদ্যোক্তা বুদ্ধ মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন তো জেলা করোনা- শূন্য হয়ে গিয়েছে। আমরা আর মানুষকে মহামারির কথা মনে করাতে চাইনি।’’ কংগ্রেস প্রভাবিত 'প্রগতি'- র অন্যতম উদ্যোক্তা মহম্মদ সইফুল বলেন, ‘‘করোনা- ভীতি দূর হচ্ছে। ওই ভীতি ফিরিয়ে আনার মানে হয় না। সামনে ভোট। তাই রাজনৈতিক বিষয় থিমে রাখা হয়েছে।’’ এই পুজোয় ঘেরা মণ্ডপ থাকে না। খোলা আকাশের নীচেই রাখা হয় প্রতিমা। করোনার প্রকোপ কমেছে ঠিকই। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, মাস্ক পরতেই হবে। বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। যদিও মঙ্গলবার দর্শনার্থীদের অনেককেই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। দল বেঁধে পুজো দেখেছেন অনেকে।
সোমবার সন্ধ্যায় পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে। তৃণমূল প্রভাবিত ‘অবসর’- এর পুজোর উদ্বোধনে ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী, অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী, রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য, জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি প্রমুখ। তৃণমূল প্রভাবিত ‘অ্যারিয়ান্স’- এর পুজোর উদ্বোধনে ছিলেন অভিনেত্রী লাভলী মৈত্র। বিজেপি প্রভাবিত ‘জাগরণ’, ‘গরিমা’- র পুজো উদ্বোধনে ছিলেন ক্রীড়াবিদ্ জ্যোতির্ময়ী শিকদার। উদ্বোধনের দিন ছাড় দেওয়া হলেও এ দিন অবশ্য কলেজ মোড়ের পুজোয় কোনও সাউন্ড বক্স বাজেনি।
সোমবার সন্ধ্যায় পুজোর উদ্বোধনী মঞ্চে বিজেপিকে খোঁচা দেন অভিনেতা সোহমও। তিনি যে পুজোর উদ্বোধনে এসেছিলেন, সেই পুজোর উল্টোদিকেই ছিল বিজেপি প্রভাবিত পুজো। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্রের ফ্লেক্স। সোহমকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এটা অরাজনৈতিক মঞ্চ। কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। আমরা না কি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নই। আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস না করতাম, তা হলে ওই ব্যানারটাই (বিজেপি প্রভাবিত পুজোর) হয়তো থাকত না ওখানে।’’