ঝাড়গ্রাম অশোক বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে বেরোচ্ছেন ডিএলএড পরীক্ষার্থীরা। নিজস্ব চিত্র
সাঁওতালি মাধ্যমের ডিএলএড কোর্সের পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র দেওয়া হচ্ছে বাংলায়। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে একজন অনুবাদক প্রতিদিন পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকছেন বটে। কিন্তু মাতৃভাষায় প্রশ্নপত্র না হওয়ায় রীতিমতো সমস্যায় পড়ছেন সাঁওতালি পরীক্ষার্থীরা।
রাজ্যের মধ্যে একমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলায় সাঁওতালি মাধ্যমে সরকারি ডিএলএড কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। ডিস্ট্রিক্ট ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিআইইটি)-এর রামগড় ক্যাম্পাসে সাঁওতালি মাধ্যমে ডিএলএড প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আদিবাসী সংগঠনগুলির বহু আন্দোলনের পর ২০২০ সালে দু’বছরের সাঁওতালি ডিএলএড কোর্স চালু হয়েছে। ২০২০-২০২২ শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়াদের পার্ট-২ পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত সোমবার থেকে। চলবে আজ, বুধবার পর্যন্ত। কিন্তু পরীক্ষা দিতে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা হতবাক। অনুবাদক পরীক্ষা কেন্দ্রে বাংলা প্রশ্নপত্র পড়ে সাঁওতালিতে তর্জমা করে দিচ্ছেন। এরপর সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে উত্তরপত্র লিখছেন পরীক্ষার্থীরা।
সোমবার ছিল ‘শিক্ষা অধ্যয়ন’ পরীক্ষা। মঙ্গলবার ‘সমকালীন শিক্ষা’র পরীক্ষা। আজ বুধবার হবে ‘পাঠক্রমে শিক্ষণ বিজ্ঞান’-এর পরীক্ষা। ডিএলএড পার্ট-১ পরীক্ষার মতো এ বারও বাংলা প্রশ্নপত্রই দেওয়া হচ্ছে। তবে পার্ট-১ পরীক্ষায় কোনও অনুবাদকও ছিলেন না। এ বার ৩৭ জন সাঁওতালি ডিএলএড পরীক্ষার্থী ঝাড়গ্রাম শহরের অশোক বিদ্যাপীঠ হাইস্কুল ভবনে পার্ট-২ পরীক্ষা দিচ্ছেন।
পরীক্ষার্থী ধনঞ্জয় সরেন, শালখান হেমব্রম, তারাশ মুর্মু, হিমাদ্রিকা হাঁসদা জানাচ্ছেন, পার্ট-১ পরীক্ষাতেও বাংলা প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্নপত্র পড়ে বুঝে লিখতে অনেক সময় গিয়েছিল। সেবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল পার্ট-২ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সাঁওতালিতে করা হবে। কিন্তু এ বারও বাংলা প্রশ্নপত্র দেওয়া হচ্ছে। সাঁওতালি পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাতৃভাষায় ডিএলএড কোর্স করেও মাতৃভাষায় প্রশ্নপত্র পড়ার সুযোগ হচ্ছে না। অনুবাদক দেওয়া হলেও পরীক্ষার সময় বাড়ানো হয়নি। মাতৃভাষায় প্রশ্নপত্র না পাওয়ায় খুবই সমস্যা হচ্ছে।
সাঁওতালি শিক্ষার অধিকার রক্ষা মঞ্চের জেলা আহ্বায়ক সৃজন হাঁসদা বলছেন, ‘‘পার্ট-১ পরীক্ষার পর আমরা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে জানিয়েছিলাম, চূড়ান্ত পরীক্ষায় যেন সাঁওতালিতে প্রশ্নপত্র হয়। কিন্তু এবারও সাঁওতালি মাধ্যমের পরীক্ষার্থীদের বাংলা প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। সাঁওতালি মাধ্যমের নামে প্রহসন চলছে।’’
ডিস্ট্রিক্ট ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিআইইটি)-এর রামগড় ক্যাম্পাসের ইনচার্জ দীপক মণ্ডল বলছেন, ‘‘এবার সাঁওতালিতে প্রশ্নপত্র না হলেও একজন অনুবাদক দেওয়া হয়েছে।’’ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান জয়দীপ হোতার দাবি, ‘‘পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখেছি সাঁওতালি মাধ্যমের পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে না। তাঁরা ভাল পরীক্ষা দিচ্ছেন। আগামী দিনে যাতে সাঁওতালিতে প্রশ্নপত্র হয় সে ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নজরে বিষয়টি আনা হবে।’’