যুযুধান: স্বামীর সঙ্গে ভোট দিয়ে বেরিয়ে গীতারানি ভুঁইয়া (বাঁ দিকে)। দিনভর বুথে বুথে ঘুরলেন সিপিএম প্রার্থী রিতা মণ্ডল জানা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
বাড়ির আয়তন যথেষ্টই। তারই মাটির বড়ির দাওয়ায় মাদুর পেতে বসেছিলেন তিনি। সামনে বড় এক কাপ লাল চা আর বিস্কুট। আর সার দিয়ে রাখা পাঁচ-পাঁচটি মোবাইল। চায়ে চুমুকের জো নেই। নাগাড়ে মোবাইল বাজছে। আর ফোন ধরলেই মেজাজ হারিয়ে তিনি বলে উঠছেন, “যা পারিস কর। আমাকে ফোন করছিস কেন, সেক্টর অফিসারকে ফোন কর।” আবার কখনও নিজেই কানে ফোন তুলে নালিশ করছেন, “সিপিএম প্রার্থী ভোট নিয়ন্ত্রণ করছে, দেখুন।” আর ফোন নামিয়ে পরিজনেদের উপর চেঁচিয়ে ফেলছেন।
খাসতালুকের ভোটে এ যে অন্য মানস ভুঁইয়া। খাতায়কলমে ময়দানে তিনি নেই। কারণ, সবং উপ-নির্বাচনে প্রার্থী মানস-জায়া গীতারানি ভুঁইয়া। তবু এ লড়াই মানসবাবুরই লড়াই। কোন্দল কাঁটা সামলে সবং যে তাঁরই, তা বোঝানোর লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে জিততে ভিকনি নিশ্চিন্তপুরের বাড়িতে বসে ফোনেই বৃহস্পতিবার ‘ভোট নিয়ন্ত্রণ’ করেছেন মানসবাবু। কখনও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভের কথা বলেছেন, আবার কখনও দলের কর্মীদের ফোনে ধমক দিয়েছেন। স্ত্রীর সঙ্গে ভিকনি নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়ে পার্টি অফিসে গিয়েও চড়া মেজাজেই দেখা গিয়েছে সবংয়ের ভূমিপুত্রকে।
তবে সস্ত্রীক ভোট দিয়ে বেরিয়ে সামনাসামনি মানসবাবু বলেছেন, “এখন গীতা ভুঁইয়া মানস ভুঁইয়াকে হারিয়ে দেবেন কি না সেটাই চিন্তা!” অর্থাৎ মানসবাবুর জয়ের থেকে উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান বাড়বে কিনা, সেটাই দেখার!
মুখে এ কথা বললেও এ দিন দিনভর যথেষ্ট ছটফট করতে দেখা গিয়েছে মানসবাবুকে। তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত তৃণমূলের জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি অবশ্য ছিলেন নিরুত্তাপ। সকাল থেকে বাড়িতে সময় কাটিয়ে দুপুরে ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন অমূল্যবাবু। বিকেলে মানসবাবুর ডাকা সাংবাদিক বৈঠকেও দেখা যায়নি তাঁকে। ছিলেন না তৃণমূলের সবং ব্লক সভাপতি প্রভাত মাইতিও। তবে এসেছিলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহরা।
মানসবাবুর স্ত্রীকে প্রার্থী করায় তৃণমূলের পুরনো নেতারা গোড়া থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন।
পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম ও বিজেপি। আর বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায় প্রচারে এসে বলে গিয়েছিলেন, অমূল্য মাইতি, প্রভাত মাইতি এমনকী মানস ভুঁইয়ার ভাইও এমন প্রার্থীকে মেনে নিতে পারছেন না। এ দিন সেই তিনজনই সাংবাদিক বৈঠকে গরহাজির থাকায় জল্পনা শুরু হয়েছে। অমূল্যবাবুর কথাতেও ধরা পড়ল খোঁচা। তিনি বলেন, ‘‘মানসবাবু নিজেই মানেন, কংগ্রেস তাড়িয়ে দিয়েছে বলেই তিনি তৃণমূলে এসেছেন। অর্থাৎ ভালবেসে তিনি এই দলে আসেননি। আমরা দলটা ভালবেসে করি। তাই দলীয় প্রার্থীর জন্য যতটুকু সম্ভব করেছি।’’
জেলার রাজনৈতিক মহলের অনুমান, গীতারনিকে প্রার্থী করা নিয়ে তৃণমূলে অন্দরের কোন্দল ভোটের দিন পর্যন্ত মানসবাবুকে স্বস্তি দেয়নি। তার উপর পুরনো দল কংগ্রেসের ভোট কোন দিকে যায়, তা নিয়েও তিনি উদ্বেগে ছিলেন।
আর সেই জোড়া ফলাতেই এ দিন বারবার মানসবাবু মেজাজ হারিয়েছেন।
যদিও সাংসদ নিজে কোন্দলের কথা মানতে নারাজ। মানসবাবু বলেন, “একেবারে বাজে কথা। এই দলে শেষ ও প্রথম কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে কে, কী বলল তার কোনও মূল্য নেই। নতুন-পুরনো এসব ভিত্তিহীন ব্যপার।” তাই দিনের শেষে সহধর্মিনীর জয় নিয়েও তিনি একশো ভাগ নিশ্চিত। হাসিমুখে বলেছেন, “আশীর্বাদের ঝড় উঠেছে সবংয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী গীতা ভুঁইয়া জিতছেন।”