ঘাটাল শহরে তৃণমূলের প্রতিবাদ ও ধিক্কার মিছিলে মানস ও সায়নী ।
লোকসভা ভোটের আগে ঘাটাল বিজেপিকে বার্তা দিতে মহামিছিলের আয়োজন করেছিল তৃণমূল। বুধবার সেই কর্মসূচি থেকে ঘাটাল থেকে বিজেপিকে উৎখাত করার ডাক দিল তারা।
একশো দিনের প্রকল্প এবং আবাস যোজনায় বকেয়া টাকার দাবিতে তৃণমূল যুবনেত্রীর কর্মসূচি সফল করতে ক’দিন ধরেই মাঠে নেমেছিল শাসক দল। দলের যুব সংগঠনও জোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ দিনের কর্মসূচিকে ঘিরে দুপুরের পর ঘাটাল শহর অচল হওয়ার আশঙ্কা ছিল।বাস্তবে হলও তাই। তৃণমূলের দাবি, বুধবার ঘাটালে ওই কর্মসূচিতে রেকর্ড ভিড় হয়েছিল।এককথায় গোটা ঘাটাল শহরে উপচে পড়েছিল ভিড়। জনপ্লাবনে ঘাটাল শহর ছাড়াও লাগোয়া দাসপুর ও চন্দ্রকোনার একাংশও ছড়িয়ে পড়ে যানজট।
এ দিন ঘাটাল অরবিন্দ স্টেডিয়াম থেকে মহা মিছিল শুরু হয়েছিল। মিছিল শুরুর আগেই অবশ্য প্রায় হাফ কিলোমিটার লম্বা লাইন পড়ে যায়। অরবিন্দ স্টেডিয়াম থেকে পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, পুরসভার মোড় হয়ে মিছিল শেষ হয় বিবেকানন্দ মোড়ে। সেখানে পথসভা হয়।
মিছিলে যুব তৃণমূল সভানেত্রী সায়নী ঘোষ ছাড়াও হাঁটেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি, চন্দ্রকোনার বিধায়ক অরূপ ধাড়া ও বিধায়ক মমতা ভুঁইয়া, দুই জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত এবং সৌরভ চক্রবর্তী, চেয়ারম্যান শঙ্কর দোলই। গোটা মিছিলে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতি সরব হয় তৃণমূল। সেখানে একশো দিনের টাকা সঙ্গে দ্রুত আবাসের টাকা দেওয়ার দাবি ওঠে।
মিছিলে জনপ্লাবন দেখে বেশ ফুরফুরে মেজাজে হাঁটতে দেখা যায় যুবনেত্রী সায়নীকে। পথসভায় বক্তৃতা করতে উঠে হাতে মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই সায়নীকে বলতে শোনা যায়, “আমার মায়েদের দেখলে মন ভাল হয়ে যায়।” যুবনেত্রী বলেন, “দিদি(মুখ্যমন্ত্রী) এখন দিল্লিতে আছেন। পাওনা টাকা আদায়ের জন্য। উনি কিন্তু নিজের বাড়ি কিম্বা বাড়ির সামনের রাস্তার জন্য দিল্লি যাননি। উনি গিয়েছেন, আপনাদের বাড়ির টাকা আনতে। আপনাদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে। আমাদের কেউ থাকুক না থাকুক, দিদি আছেন মাথার উপরে। তাই তো আপনারাও এসেছেন।” তারপরই সায়নী মঞ্চে গাইলেন হিন্দি গান। বললেন, বিজেপি ভোটের আগে বলে বেড়ায়, “ইয়ে দিল তুম বিন ক্যাহি লাগতা নেহি, হাম ক্যায়া করে, ওহি ক্যাহে দো জানেবাফা।” আর ভোট মিটে গেলে, ‘কোথা কোথা খুঁজেছি, তোমায়। তখন বিজেপিকে পাওয়া যায় না।দিদিকে ডাকলেই পাওয়া যায়।” মোদীকে কটাক্ষ করে সায়নীর খোঁচা, “আপনি হাজার টাকার স্যুট পরতে পারেন। দেড় লক্ষ টাকার পেন পকেটে রাখতে পারেন। আট হাজার কোটি টাকার প্লেনে চড়তে পাড়েন। আর গরিব মানুষের বাড়ির টাকা,একশো দিনর টাকা আটকে রাখছেন।চাইলেও দিচ্ছেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি ভিখারি নাকি। সাহস হয় কী করে। বেশি উড়ছেন তো। বাংলার মানুষ সবই দেখছেন।”
বিজেপিকে মানসের বার্তা, “একশো দিনের টাকার দাবিতে যুব তৃণমূল সারা ঘাটালকে জনজোয়ারে উত্তাল করে দিয়েছে। বাংলার আবাস চাই। বাংলার রাস্তা চাই। টাকা আটকে বাংলাকে শ্বাসরুদ্ধ করতে পারবে না। টাকা দিয়ে দিন প্রধানমন্ত্রী।”
গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের হাতছাড়া হয় ঘাটাল বিধানসভা। লোকসভা ভোটে সেই ঘাটাল যাতে তৃণমূলের অনুকূলে ফিরে আসে, তারজন্য মরিয়া শাসক দল তৃণমূল। দলের সংগঠনকে ঢেলে সাজার পাশাপাশি জনসংযোগ বাড়াচ্ছে তারা। লোকসভা ভোটের আগে তাই বিজেপিকে বার্তা দিতে বুধবার সায়নীর কর্মসূচিতে ব্যাপক জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল তৃণমূল।
ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলার সব ব্লক থেকেই বাসে এ দিন তৃণমূল কর্মীরা ঘাটালে জড়ো হয়েছিলেন।