মূল সড়কটি ১২০ ফুট প্রশস্ত। কিন্তু জবরদখলের জেরে ওই সড়কপথ সঙ্কীর্ণ হয়ে ১৮ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। রেলশহর খড়্গপুরের প্রবেশদ্বার চৌরঙ্গী-ইন্দা ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোডের এমনই হাল। যানজট এখানে নিত্য সমস্যা। বাড়ছে দুর্ঘটনার প্রবণতাও। সমস্যা সমাধানে পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর বিভাগ রাস্তা সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছে। পুজোর আগেই কাজ শুরুর কথা জানিয়েছে তারা।
সড়ক সম্প্রসারণের প্রাথমিক পর্যায়ে জবরদখল উচ্ছেদ করাই হবে পূর্ত দফতরের মূল লক্ষ্য। তার আগে পুরসভাকে জলের পাইপ ও বিদ্যুৎ দফতরকে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্য আবেদন জানিয়েছে পূর্ত দফতর।
প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ জনসংখ্যার এই শহরের পরিধি ক্রমে বাড়ছে। এক দিকে রেলের দীর্ঘতম জংশন স্টেশন, অন্য দিকে কলকাতা-মুম্বই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ও খড়্গপুর-ভুবনেশ্বর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক খড়্গপুরকে গতিশীল করেছে। বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। সেগুলির অধিকাংশই শহরের এই প্রবেশপথে অবস্থিত। রয়েছে ব্যাঙ্ক, বিএসএনএলের ডিভিশনাল অফিস, বিদ্যুতের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারের অফিস, মহকুমার পূর্ত, ভূমি রাজস্ব, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, তথ্য সংস্কৃতি ও শ্রম দফতরের মতো একাধিক সরকারি অফিস। একটি কলেজ, দু’টি স্কুলও ওই সড়কের উপর নির্ভরশীল। ব্যস্ত এই রাস্তায় ফুটপাথ নেই। জবরদখলের জেরে রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই। বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামতে হয়। এক সময় মহকুমা পূর্ত দফতর এই সড়কের দেখভাল করলেও হাল ফেরাতে পারেনি। বছর খানেক দায়িত্ব নিয়েছে পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর বিভাগ। কিন্তু সড়কের এই সঙ্কীর্ণ দশায় ক্ষোভ এখনও ক্ষোভ কাটেনি শহরবাসীর।
শহরে ওটি রোড বলে পরিচিত এই সড়কে ছিঁটেফোটা সৌন্দর্যায়ন দেখা যায়না। পুরসভা এ বিষয়ে উদাসীন বলেই শহরবাসীর অভিযোগ। বছর চারেক আগে পুরসভার প্রস্তাবে চৌরঙ্গী থেকে ইন্দা মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২০ ফুট চওড়া সড়ক চার লেনের করার পরিকল্পনা নেয় পূর্ত দফতর। সেটি সাড়ে ১১ মিটার করে দু’টি ভাগে ভাগ করে ফুটপাথ গড়ার ভাবনাও ছিল। অর্থ সঙ্কটে সেই পরিকল্পনা রূপায়িত হয়নি। এখন গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ৫ মিটারে গিয়ে ঠেকেছে। নেই পথবাতি। দুর্ঘটনাও বেড়েছে। গত ৯ অগস্ট ইন্দার কমলা কেবিনে মৃত্যু হয় এক রেলকর্মীর। ২০ জানুয়ারি অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী দোকান থেকে সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে কলেজের সামনে ট্রাক্টরের ধাক্কায় মারা যান। ইন্দার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা মহুয়া চৌধুরী, সমাজকর্মী প্রসেনজিৎ দে বলছিলেন, “যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গেই ইন্দার রাস্তার দু’দিকে দোকানগুলি তাঁদের পরিধি বাড়িয়েছে। ফলে রাস্তা সরু হয়ে যাচ্ছে। ওই রাস্তায় প্রাণ হাতে চলতে হয়।”
গত জানুয়ারিতেই ওই রাস্তার কাজের জন্য দরপত্র ডেকেছিল পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর বিভাগ। আপাতত চৌরঙ্গী থেকে ইন্দা মোড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশ ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ মিটার করা হবে। বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে রাস্তার কাজে প্রায় ৭ কোটির বরাত দেওয়া হয়েছে। পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সলিল দাস বলেন, “চৌরঙ্গী থেকে ইন্দার ওই সড়কটি দুই লেনের করে মোট ১০ মিটার চওড়া করা হবে। এখন বর্ষা চলায় কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। পুজোর আগেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
অবশ্য রাস্তার কাজে নামার আগেই ওই রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য বিদ্যুতের খুঁটি ও পুরসভার জলের পাইপলাইন সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। এ জন্য টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছে পূর্ত দফতরের পক্ষ থেকে। সলিল দাস বলেন, “আমরা জলের পাইপ লাইন সরাতে পুরসভাকে ১৫ লক্ষ ও বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে বিদ্যুৎ বন্টন বিভাগকে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়েছি। প্রাথমিক ভাবে ওই কাজ না হলে নির্মাণকাজে হাত দেওয়া যাবে না।” এই বিষয়ে পুরপ্রধান বলেন, “ইতিমধ্যেই ওই সড়কের জমির পরিমাপ হয়ে গিয়েছে। আমরা আমাদের পাইপ লাইন সরানোর কাজ শুরু করে দেব। রাস্তার কাজ শেষ হলে দু’ধারে পথবাতি লাগানো হবে।”
অন্য দিকে, ওই সড়কের অধিকাংশ এলাকা জুড়েই গ্যারাজ, হোটেল, বহুতল, মনোহারি দোকান, মোবাইল দোকান ইত্যাদি রয়েছে। এগুলির অধিকাংশই পূর্ত দফতরের জমির ওপর অবৈধভাবে গজিয়ে উঠেছে। ফলে উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই বিষয়ে ওই কাজ যাতে দ্রুত গতিতে হয় সে জন্য খড়্গপুরের মহকুমাশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “বর্ষা চলে গেলেই পূর্ত দফতর কাজে নামবে বলে জানিয়েছে। আপাতত বিদ্যুতের খুঁটি ও জলের পাইপ লাইন সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরকে। কাজে যাতে কোনওভাবে বাধা না পায় আমরা সব রকমভাবে প্রস্তুত। আশা করছি স্থানীয় মানুষও সহযোগিতা করবেন।” তবে দোকান উচ্ছেদের প্রশ্নে ইন্দার ব্যবসায়ী তথা জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজা রায় বলেন, “এই সড়ক শহরের জীবনরেখা। এই সড়ক সম্প্রসারণে আমরাও দাবি জানিয়েছিলাম। তাই সড়কের কাজ যাতে বাধা না পায় তা আমরা দেখব। তবে যে সব দোকান উচ্ছেদ হবে তাদের পুনর্বাসনের জন্য কিছু ভাবার বিষয়ে পুরপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসব।”