বাসে উঠলেই সমস্যা। সামনের দরজা দিয়ে উঠে পিছনে গিয়ে টিকিট কাটলে যাত্রীর দোষ। বখরা নিয়ে দুই কন্ডাক্টরের ঝামেলায় বলি সাধারণ যাত্রী। প্রতিবন্ধী কি বরিষ্ঠ নাগরিক আসনে বসতে চাইলে চেঁচামেচি। ভাড়া নিয়ে গণ্ডগোল। স্কুল পড়ুয়া ব্যাগ নিয়ে উঠলে সমস্যা। বাস থেকে তাড়াতাড়ি নামতে বলে অনেককেই ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেন কন্ডাক্টর— শহর কলকাতার ছবিটা জেলাতেও অচেনা নয়। বুধবারও তেমনই ঘটনার সাক্ষী রইল পূর্ব মেদিনীপুর। হলদিয়ার রানিচক মো়ড়ে বাসে উঠতে চাওয়ায় এক স্কুল ছাত্রীকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাসকর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনায় ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী আহত হয়। চোট গুরুতর নয় বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু স্কুল পড়ুয়াদের প্রতি এই অন্যায়ের প্রতিবাদে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ওই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীরা। যোগ দেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁদের অভিযোগ, অনেক সময়ই পড়ুয়ারা কম পয়সা ভাড়া দেয়। সেই রাগেই বাসকর্মীরা তাদের বাসে তুলতে চায় না। কিন্তু এ রকম চলতে থাকলে বাচ্চাদের রাস্তায় চলা দায়।
বুধবার হলদিয়ার বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী রানিচকে স্কুলের সামনে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে উঠতে যাচ্ছিল। সে সময় এক বাস কর্মী তাকে বাসে তোলা হবে না জানিয়ে ঠেলে দেয়। মাটিতে পড়ে চোট পায় ওই ছাত্রী। এরপরই শুরু হয় বিক্ষোভ। পথ অবরোধের পাশাপাশি বাসটিতে ভাঙচুর চালানো হয়। অভিযোগ ওই বাসকর্মীকেও মারধর করেন কিছু মানুষ। জানা গিয়েছে বছর তিনেক আগে ওই একই জায়গায় এক ছাত্রী বাসে উঠতে গিয়ে পড়ে যায়। বাসটি তাকে না তুলেই ছেড়ে দিয়েছিল। ফলে ওই বাসের পিছনের চাকা পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। মারাত্মক জখম হয় সে। অবরোধকারীরা দোষীদের শাস্তি ও পড়ুয়াদের নিরাপত্তার দাবি জানান। পরে পুলিশ এবং হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল এসে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়।
পূর্ব মেদিনীপুর বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক সুকুমার বেরা জানান, ‘‘ঠেলে দেওয়া যদি ঘটে থাকে তবে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কী ঘটেছিল তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ তাঁর সাফাই, স্কুল শুরু ও ছুটির সময় বাসে পড়ুয়াদের ভিড় হয়। তাদের পিঠের ব্যাগে অন্য যাত্রীদের সমস্যা হয়। সে জন্যই তাদের বাসে তুলতে চান না কর্মীরা। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা বলেছি ছাত্রছাত্রীদেরও বাসে তুলতে হবে।’’ মহকুমাশাসক শঙ্কর নস্করও বিষয়টি নিয়ে বাস মালিক সংগঠনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার আশ্বাস দেন। প্রধান শিক্ষক হরিদাস ঘটক জানান, ‘‘এ দিন বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। হলদিয়া থানায় বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছি। ছাত্রছাত্রীরা যাতে বাসে সুষ্ঠভাবে যাতয়াত করতে পারে ও স্কুলের সময় রানিচক বাস স্টপে ট্রাফিকেরও দাবি জানিয়েছি।’’