পাঁশকুড়ার প্রজাবাড়ে কংসাবতীর বাঁধ সারাতে ফেলা হচ্ছে মাটির বস্তা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে ছাড়া জলে ফুলেফেঁপে উঠেছে কংসাবতী। জলের চাপে বেশ কয়েকটি জায়গায় ধস নেমেছে নদীবাঁধে। ভারী বৃষ্টিতে পাঁশকুড়া পুর এলাকার বেশ কিছু ওয়ার্ডেও জমতে শুরু করেছে জল।
বৃহস্পতিবার মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে জল ছাড়ায় শুক্রবার সন্ধ্যে থেকে কংসাবতী নদীর জলস্তর বাড়তে শুরু করে। পাঁশকুড়ার রানিহাটি, গড়পুরুষোত্তমপুর ইত্যাদি এলাকায় নদীবাঁধে ধস নেমেছে। বাঁধ রক্ষা করতে সেচ দফতর মাটির বস্তা ফেলা শুরু করেছে। সেচ দফতরের পাঁশকুড়া ২-এর এসডিও অভিনব মজুমদার বলেন, ‘‘যে সমস্ত জায়গায় ধস নেমেছিল সেগুলি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামত করা হয়েছে। নদীর জলস্তর বৃদ্ধি আপাতত বন্ধ হয়েছে। নতুন করে বৃষ্টি না হলে আপাতত ভয়ের কিছু নেই।’’
রবিবার চণ্ডীয়া নদীর তীরবর্তী ময়নার বলাইপন্ডা বাজার থেকে শ্রীধরপুর লকগেট ও জায়গীরচক পর্যন্ত নদীবাঁধের চার জায়গায় ধস নামায় বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। শনিবার সকাল থেকেই ওই সব জায়গায় বাঁধ মেরামতি শুরু হয়েছে। তবে কংসাবতীর জলস্তর বৃদ্ধির পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়িয়েছে আবহাওয়া দফতর থেকে ফের নিম্নচাপের পূর্বাভাস। রবিবার থেকে জেলায় এই নিম্নচাপের প্রভাব পড়ছে জানানো হয়েছে। এর ফলে জেলাজুড়ে ফের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংসাবতী ও চণ্ডীয়া নদীতীরের এলাকার বাসিন্দারা বন্যার আশঙ্কা করছেন। ময়না পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুব্রত মালাকার বলেন, ‘‘কংসাবতী নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। নদীবাঁধ ভেঙে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে। চণ্ডীয়া নদীর বাঁধে ধসের জায়গাগুলিতে দ্রুতগতিতে মেরামতির কাজ চলছে। দুটি নদীর বাঁধেই সেচ দফতর ও পঞ্চায়েতের তরফে নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’
সব থেকে বিপজ্জনক পরিস্থিতি পাঁশকুড়ার প্রজাবাড়ে। সেখানে পাঁশকুড়া ও ময়নার মধ্যে সেতু তৈরির কাজ চলছে। ২০১৭ সাল থেকে কাজটি করছে পূর্ত দফতর। কাজের জন্য ওই জায়গায় নদীর বাঁধ কাটা ছিল। রবিবার নদীর জল বাঁধের ওই কাটা অংশ দিয়ে গ্রামে ঢুকতে শুরু করে। ঘটনাস্থলে আসেন পূর্ত দফতরের আধিকারিরা। মাটির বস্তা ফেলে জল ঢোকা বন্ধ করার কাজ শুরু হয়েছে। পাঁশকুড়ার বিডিও ধেনধুপ ভুটিয়া বলেন, ‘‘প্রজাবাড়ে বাঁধ রক্ষার জন্য জেলা পরিষদ, সেচ দফতর একযোগে কাজ শুরু করেছে।’’
অন্যদিকে ভারী বৃষ্টিতে পাঁশকুড়া শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে জল জমতে শুরু করেছে। এদিন শহরের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু জায়গায় হাঁটুসমান জল জমেছে। পাঁশকুড়া স্টেশন বাজারের বেশ কিছু দোকানে ও বাড়িতেও বর্ষার জল ঢুকে পড়ে। বেহাল নিকাশির কারণেই এমন দশা বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তবে রবিবার জোয়ারের সময় জলস্তর অনেক কম থাকায় এদিন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে তমলুক পুর কর্তৃপক্ষ। অমবস্যার ভরা কটালে জল ঢুকে তমলুক শহরে রূপনারায়ণ নদের তীরবর্তী বেশকিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল। ৪০০টির মতো বসতবাড়ি জলে ডুবে যায়।
জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘কংসাবতী ও চণ্ডীয়া সহ জেলার বিভিন্ন নদীর জলস্তরের পরিস্থতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। সমস্ত ব্লক প্রশাসন ও পুরসভাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’