বন্দর তৈরি ঘিরে আশাবাদী তাজপুরবাসী। — ফাইল চিত্র।
‘স্বপ্ন’ তৈরি হচ্ছিল জেলার উপকূলের তাজপুরকে ঘিরে। পর্যটন তো ছিলই। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এখানেই সমুদ্র বন্দর বানানোর সমস্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তা ঘিরে এলাকার আনুষাঙ্গিক উন্নয়নের জোয়ার আসারও পরিকল্পনা করেছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু সেই সব এখন তাঁদের কাছে ধোঁয়াশা লাগছে। সৌজন্য— আদানি গোষ্ঠী এবং কেন্দ্রের সম্পর্ক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়ের মন্তব্য।
মঙ্গলবার ওড়িশা রওনা হওয়ার আগে এক প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘একশ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। অথচ কিছু মানুষ প্রচুর টাকা সংগ্রহ করছেন। আদানি থেকে মেহুল তাদের প্রিয় বন্ধু। বিজেপি সরকার শুধুমাত্র তাদের জন্য কাজ করছে।’’ এই আদানি গোষ্ঠীই তাজপুরে বন্দর তৈরির দায়িত্বে রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে যে বন্দর গড়া নিয়ে প্রশ্ন ছিলই, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্যে সংশয় দেখছেন এলাকাবাসী। বুধবার দুপুরে শঙ্করপুরে গিয়ে দেখা গেল, তাজপুর বন্দরের সাইট অফিস খোলা রয়েছে। সেখানে তিনজন নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াও এক কর্মী সর্বক্ষণ থাকেন। তাদেরই একজন দিলীপ মাইতি বললেন, ‘‘পুজোর আগে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর ৬০ থেকে ৭০ জনের একটি প্রতিনিধি দল সাইট অফিসে এসেছিলেন। এরপর তারা বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত কিছু এলাকার ঘুরে দেখে গিয়েছেন। এক জায়গায় সীমা নির্ধারণের জন্য একটি পতাকা লাগিয়েছিলেন।’’ তবে গোটা তাজপুর এলাকায় ঘুরে বন্দর তৈরির অন্য কোনও কাজ শুরু নিদর্শন এদিন মেলেনি।
মঙ্গলবার কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ইতিমধ্যে জেনেছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্যজীবী বললেন, ‘‘আগে কেন মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারলেন না, আদানিরা খারাপ? যিনি কাজের বরাত তুলে দিচ্ছেন, তিনি যদি সেই সংস্থাকে চোর বলেন। তাহলে বুঝে নিন বন্দরের ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে!’’ রামনগর -১ ব্লকের জলধা গ্রামের এক যুবক কৌশিক মহাকুড়ের দাবি, ‘‘আদানিদেরহাল এমনিতেই খারাপ বলে শুনেছি। তারপর তাদের আবার মুখ্যমন্ত্রীই খারাপ বলছেন এতদিন বাদে। তারা আদৌ এখানে বন্দর তৈরি করবেন তো!’’ একই রকম ভাবে চন্দন বাড়ৈ নামে আরেক যুবক বলেন, ‘‘বন্দর হলে তো খুব ভাল হয়। এলাকার মানুষজনের কর্মসংস্থান হত। এখন যদি আদানিদের প্রতি রাজ্য সরকারের মোহভঙ্গ হয়, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’’
উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর সরকারি বিজয়া সম্মেলন অনুষ্ঠানে আদানি গোষ্ঠীর অন্যতম কর্ণধার করণ আদানির হাতে সম্মতিপত্র তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত হলদিয়া বন্দর এলাকায় আদানি গোষ্ঠীর একটি সাইট অফিস রয়েছে। শঙ্করপুরেও ২০১৯ সালে একটি সাইট অফিসের সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে টেন্ডার পাওয়ার পর নতুন করে আদানি গোষ্ঠী একটি সাইট অফিস খুলতে চাইছে বলে খবর। প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, সরকারিভাবে সম্মতিপত্র বা ইন্টেনশন অফ অ্যাকসেপ্টান্স তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তাজপুরে বন্দর তৈরির জন্য একটি সময় সীমাও বেঁধে দিয়েছেন। সেই সময় সীমা এখনও পেরোয়নি। তার আগে তাজপুর বন্দর তৈরি নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনও কিছু করা মানেই আইনি জটিলতায় পড়তে হতে পারে।
এরই মধ্যে তাজপুরে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেছে জেলার মৎস্যজীবীরা। কয়েকদিন আগে সৈকত শহর দিঘায় একটি বড় মাপের প্রতিবাদ মিছিল এবং পথসভা আয়োজন করে দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরাম। তাদের দাবি, গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠলে এলাকার ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন না। সব আশঙ্কা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত কবে জমি অধিগ্রহণ থেকে বন্দরের পরিকাঠামো তৈরি কাজ শুরু হবে, তার অপেক্ষায় মৎস্যজীবী অধ্যুষিত গ্রামগুলির বাসিন্দারা।