এখনও জলমগ্ন পাঁশকুড়ার খসরবন গ্রাম।
দেবীর আগমনের আগেই বানভাসি হয়েছে এলাকা। সেই দুর্যোগের ধাক্কা সামলে পাঁশকুড়া, কোলাঘাট এলাকার একটা বড় অংশের বাসিন্দা যে এবার পুজোর আনন্দে সামিল হতে পারবেন না, সেই আশঙ্কা ছিলই। শঙ্কা যেমন সত্যি হয়েছে, তেমনই উৎসবের আবহে গ্রামীণ অর্থনীতিও অল্পবিস্তর ধাক্কা খেয়েছে। সব মিলিয়ে জৌলুসহীন ভাবে পুজো মিটেছে বন্যা কবলিত এলাকায়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর কংসাবতী নদীর বাঁধ চার জায়গায় ভেঙে কার্যত গোটা পাঁশকুড়া প্লাবিত হয়। বন্যায় আংশিক বা পুরোপুরি বাড়ি ক্ষতি হয়েছে এরকম ৫০০টি জমা পড়েছে ব্লক প্রশাসনে। বন্যায় রাস্তার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। এখনও জলমগ্ন রয়েছে খসরবন, কামিনাচক-সহ পাঁশকুড়ার একাধিক গ্রাম। এদিকে, বাঁধ ভাঙার সপ্তাহ কয়েক পরেই ছিল দুর্গা পুজো। এই অল্প সময়ে ঘর গুছিয়ে উঠতে পারেননি দুর্গতরা। ফলে এবার ওই সব এলাকাবাসী পুজোতে সেভাবে অংশ নিতে পারেননি। অন্য বছর পুজোর চারদিন পাঁশকুড়া এলাকার মণ্ডপগুলিতে মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ে। এবার একবারে উল্টো ছবি। কেশাপাট, মেচগ্রাম, পাঁশকুড়া বাজার এলাকা বাদে বাকি জায়গাগুলিতে এবার পুজোয় আগের মতো ভিড় হয়নি। রাস্তাঘাটও ছিল অনেকটাই ফাঁকা।
অল্প বিস্তর যা ভিড় হয়েছে, তা দেখা গিয়েছে পাঁশকুড়া এলাকায় মূল রাস্তার ধারের কিছু মণ্ডপে। খসরবন নীচু গ্রামের বাসিন্দা অমলেন্দু শাসমল বলেন, ‘‘এখনও আমার বাড়ির সামনে বন্যার জল জমে। এক হাঁটু জল পেরিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সামনের কিছু প্যান্ডেলে গিয়ে দেখে বিকেলের মধ্যে বাড়ি ফিরেছি। কারণ সন্ধ্যা হলেই সাপের উপদ্রব। অন্যবার অবশ্য বাড়ির সবাই মিলে পাঁশকুড়ার সমস্ত জায়গায় যেতাম প্রতিমা দর্শনে যেতাম।’’ মঙ্গলদ্বারির বাসিন্দা অসীম কুমার সামন্ত বলছেন, ‘‘আমাদের এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। এখন জল নেমেছে। তবে বন্যায় মানুষজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমার বাড়ির সামনের পুজো মণ্ডপে এবার সেভাবে ভিড় হয়নি। পুজো উদ্যোক্তারা পুজোর অনুষ্ঠানেও কাটছাঁট করেছেন।’’
পাঁশকুড়া এলাকাটি মূলত কৃষি নির্ভর। ভরা আমন ও ফুল চাষের মরসুমে বন্যার ফলে ক্ষতির মুখে কৃষকেরা। পাঁশকুড়া ব্লকে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর আমন চাষ নষ্ট হয়েছে। খন্ডখোলা এলাকায় ৫ হেক্টর পান এবং পাঁশকুড়ায় প্রায় ৩০০ হেক্টর ফুলচাষ পুরোপুরি নষ্ট। অনেকে পুজোর সময়ে দোকান দিয়ে আর্থিক আয় করেন। তবে এবার পুজোয় ভিড় কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে স্টল ব্যবসায়ীরাও। শ্যামল রানা নামে এক স্টল ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এবার পুজোয় ভিড় কম হওয়ায় বেচাকেনা ভাল হয়নি।’’ এ ব্যাপারে পাঁশকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুজিত রায় বলছেন, ‘‘বন্যা গ্রামীণ জীবন জীবিকায় প্রভাব ফেলেছে। তাই এবার মণ্ডপগুলিতে ভিড় একটু কম হয়েছে। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’