প্রতীকী ছবি।
মেদিনীপুরের গোপগড় ইকোপার্কে গড়ে উঠতে চলেছে দক্ষিণবঙ্গের প্রথম অর্কিড জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ কেন্দ্র। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা যেমন অযোধ্যা পাহাড়, রানিবাঁধের সুতান, শুশুনিয়া, কাঁটাপাহাড়ি, বেলপাহাড়ি, গড়পঞ্চকোট, নয়াগ্রামের তপোবন থেকে অর্কিড আনা হবে এখানে। প্রায় এক হাজার বর্গফুট জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডের সংরক্ষণের ব্যবস্থাও হবে।
সম্প্রতি গোপগড়ের পার্কে গিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন অর্কিড বিশেষজ্ঞরা। ছিলেন ‘ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট অফ আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ’ (টিআইইইআর)-এর সম্পাদক তথা কাপগাড়ির সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ের ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান প্রণব সাহু, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যার অধ্যাপিকা নীলাঞ্জনা দাস চট্টোপাধ্যায়, অর্কিড বিশেষজ্ঞ শাশ্বত মাইতি, গবেষক শুভেন্দু ঘোষ প্রমুখ। ছিলেন মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহাও।
প্রস্তাবিত কেন্দ্র গড়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে ‘ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট অফ আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ’। সংস্থার সম্পাদক প্রণববাবু বলছিলেন, “মেদিনীপুরে এমন কেন্দ্র গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন। এতে গবেষকরা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি, ইকোপার্কের সৌন্দর্যায়নও হবে।”
বন দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, অর্কিড ফুলের বিশেষত্ব হল মাস খানেকেরও বেশি সময় ধরে ফুল ফুটে থাকে। মাটি ও এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই অর্কিডের চারা বাছা হবে। প্রকল্প এলাকা সূক্ষ্ম জালের আচ্ছাদনে ঢেকে (শেড-নেট) চাষ করা হতে পারে। শেড-নেট দিয়ে ঘেরা ঘরের মতো দেখতে অর্কিড খেতে সূর্যের আলো সরাসরি প্রবেশ করতে পারবে না। তাঁর কথায়, “ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাঁতে পাহাড়ি এলাকার গাছ হলেও অর্কিডের বিশেষ কিছু প্রজাতি উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও জন্মায়। এ রাজ্যে প্রধানত ডেনড্রোবিয়াম ও ক্যাটালিয়া প্রজাতির অর্কিডের চাষ হয়। মেদিনীপুরের এই কেন্দ্রেও পরীক্ষামূলক ভাবে এই চাষ হবে।”
প্রণববাবু বলছিলেন, “একটি অর্কিড পরিণত হতে এক-দেড় বছর সময় নেয়। তারপর তা থেকে দীর্ঘদিন ধরে ফুল ও নতুন চারা পাওয়া যায়।” মেদিনীপুরের এক বনকর্তার কথায়, “এক-দেড় বছর পরিচর্যার পরেই গাছ থেকে নতুন গাছ ও ফুল দুই-ই পাওয়া যায়। কেউ আবার কাঠকয়লা বা ইটের টুকরো দিয়েও অর্কিডের জমি তৈরি করেন।”
শীঘ্রই গোপগড় ইকোপার্কের প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অর্কিডের জন্য জমি তৈরির কাজ শুরু হবে। ঝুলন্ত টবেও কিছু অর্কিড লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যে টবগুলো ঘেরা জায়গায় রাখা হবে। মেদিনীপুরের ওই বনকর্তার কথায়, “আমরা নিশ্চিত, কেন্দ্রটি গড়ে উঠলে এই পার্কের আকর্ষণ আরও বাড়বে। পর্যটকদের কাছে এই পার্ক আরও আকর্ষণীয় হবে।”