চলছে রাস্তার কাজ। নিজস্ব চিত্র
৭ জানুয়ারি নেতাই দিবসের আগে লালগড়ের নেতাই গ্রামের খন্দপথ মেরামতের কাজ শুরু হল।
বছর তিনেক ধরে রাস্তাটি সারানোর দাবি জানাচ্ছিলেন নেতাইবাসী। অবশেষে নেতাই দিবসের আগেই ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (ডব্লিউবিএসআরডিএ) তত্ত্বাবধানে লালগড়ের বাঘাকুলি থেকে নেতাই গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পিচের রাস্তাটি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ করা হয়েছে ৩১ লক্ষ টাকা। মঙ্গলবার নেতাই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার ক্ষত মেরামতের কাজ চলছে। তবে নেতাইবাসীর অভিযোগ, প্রতি বার মেরামতের কয়েক মাস পরেই রাস্তাটি ফের খানাখন্দে চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। তবে ডব্লিউবিএসআরডিএ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ভারী গাড়ি চলাচলের ফলে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার ওই রাস্তাটি সারানোর পরে ফের খারাপ হচ্ছে। ডব্লিউবিএসআরডিএ-এর ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শুভেন্দু পাল বলছেন, ‘‘বাঘাকুলি থেকে নেতাই পর্যন্ত তিন কিমি রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই রাস্তাটি মেরামত হয়ে যাবে।’’
স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, কংসাবতী থেকে বালি তুলে ওই রাস্তা দিয়ে ট্রাক্টরে পরিবহণ করা হচ্ছে। অনেক সময়ই বালিবাহী ডাম্পারও ওই রাস্তায় যায়। বহন ক্ষমতার চেয়ে বেশি ভারী যানবাহন যাতায়াতের ফলে রাস্তার অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তাছাড়া লালগড়-নেতাই রাস্তাটিতে এখন লালগড়-সিজুয়া রুটের বাসও চলে। এ ছাড়া কৃষিনির্ভর এলাকা হওয়ায় নিত্য ওই রাস্তা দিয়ে কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক্টরও চলছে। ডব্লিউবিএসআরডিএ-এর ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, ‘‘রাস্তাটিকে নতুন করে তৈরি করা দরকার। যার জন্য বিপুল বরাদ্দ প্রয়োজন। এছাড়াও নতুন করে রাস্তাটি তৈরি করতে গেলে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন, যা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।’’ নেতাই গ্রামের বাসিন্দা লালগড় অঞ্চল যুব তৃণমূলের সভাপতি জয় রায় বলেন, ‘‘মেরামতের পরে ফের রাস্তা রাস্তা খারাপ হচ্ছে। রাস্তাটি নতুন করে তৈরি করা দরকার। শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’’
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। গুলিতে মৃত্যু হয় চার মহিলা সহ ৯ গ্রামবাসীর। আহত হন ২৮ জন। ওই ঘটনার পরে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। ওই সময়ে লালগড় থেকে নেতাই হয়ে ডাইনটিকরি পর্যন্ত ৬ কিমি রাস্তাটি কাঁচা ছিল। বিরোধী নেত্রী হিসেবে নেতাই গ্রামে এসে রাস্তাটি পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নানা জটিলতায় লালগড় থেকে নেতাই হয়ে ডাইনটিকরি পর্যন্ত ৬ কিমি রাস্তার কাজ শেষ হয় ২০১৪ সালের জুনে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাড়ে ৩৯ লক্ষ টাকা খরচ করে বাঘাকুলি থেকে নেতাই পর্যন্ত তিন কিমি রাস্তা মেরামত করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ৪১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে নেতাই থেকে ডাইনটিকরি পর্যন্ত বাকি তিন কিমি রাস্তা মেরামতের কাজ হয়। কিন্তু বাঘাকুলি থেকে নেতাই রাস্তাটি তিন বছরের মধ্যেই বেহাল হয়ে পড়ায় নেতাই দিবসের আগে এবার রাস্তাটি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।