দলের একঝাঁক নেতা-কর্মীকে নিয়ে বছরখানেক আগেই কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে গিয়েছিলেন সবংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। মাসপাঁচেক আগে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় শূন্য হয়ে যায় সবং বিধানসভা আসনটি। আগামী ২১ ডিসেম্বর এই আসনে উপ-নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। ২৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত হবে ভোটের ফল।
গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় একমাত্র কংগ্রেসের ‘গড়’ হিসেবে পরিচিত সবংয়েই জয় পেয়েছিল বাম-কংগ্রেস জোট। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে প্রচারও করতে দেখা গিয়েছিল মানসবাবুকে। ভোটের আগে সবংয়ে তৃণমূল কর্মী খুনে নাম জড়ায় মানসবাবু-সহ একাধিক কংগ্রেস নেতা-কর্মীর। ভোট মেটার পর মাস কয়েক যেতে না য়েতেই অবশ্য উল্টে যায় পাশা। দল ছেড়ে শাসক শিবিরে যোগ দেন তৎকালীন সবংয়ের বিধায়ক। বিরোধীদের তখন অভিযোগ ছিল, তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনার মামলা থেকে বাঁচতেই দলবদল করেছেন মানসবাবু।
সবংয়ে গোষ্ঠীকোন্দলে দীর্ণ শাসকদলও। মানসবাবুরা তৃণমূলে আসার পর থেকেই শাসকদলে পুরনো কর্মীদের সঙ্গে দলে নতুন আসা নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নেতৃত্বের কপালে। গোষ্ঠীকোন্দল থামাতে মানসবাবুকেও ময়দানে নামতে হয়েছে। তারপরেও কোন্দলে যে বিশেষ রাশ টানা যায়নি, সবংয়ের পর পর গোলমালের ঘটনা তারই প্রমাণ। এই পরিস্থিতিতে সবংয়ে ভোটের দামামা বাজার পরই তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, মানসবাবুর ঘনিষ্ঠ কাউকেই ভোটে প্রার্থী করা হতে পারে। শাসকদলেরই অন্য একটি সূত্রের দাবি, দলে যে ভাবে নতুন-পুরনো বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে তাতে বাইরে থেকে কাউকেও প্রার্থী করা হতে পারে।
সবংয়ের তৃণমূল নেতা অমূল্য মাইতি বলছেন, “দিদি যাঁকে প্রার্থী করবেন তার জন্যই লড়াই করব। মানসদা আর আমি, দুই ভাই মিলে মাঠে নেমে প্রচার করব। তৃণমূল জয়ী হবেই।” জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সবংয়ের ভূমিপুত্র সাংসদ মানসবাবুও। তিনি বলেন, “বাংলায় কংগ্রেস অবক্ষয়ের শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে। সিপিএমও দিশাহারা। এই পরিস্থিতিতে সবংয়ের সব মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেছে। তাই নেত্রী যাঁকেই প্রার্থী করবেন তাঁর হয়ে সকলে লড়াই করব।”
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সুব্রত বক্সীর ডাকে শুক্রবারই কলকাতায় গিয়েছিলেন দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। অজিতবাবুর দাবি, জেলার সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘সবংয়ের উপ-নির্বাচনে আমরা ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জিতব।”
‘গড়’ ধরে রাখতে মরিয়া কংগ্রেসও। ওয়াকিবহাল মহলের মত, সবংয়ের এই ভোট কার্যত কংগ্রেসের কাছে ‘লিটমাস টেস্ট’। মানস ভুঁইয়াকে ছাড়াও যে কংগ্রেস সবংয়ে লড়াই দিতে পারে, তা প্রমাণ করার সুযোগও বটে। তবে কংগ্রেস একা ভোটে লড়বে, না কি বামেদের সঙ্গে জোট করবে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দলের এক সূত্রে খবর। সবংয়ের কংগ্রেস নেতা চিরঞ্জিত ভৌমিক বলেন, “সিপিএমের সঙ্গে জোটের বিষয় নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্ব চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে আমরা একক ভাবে লড়াইয়ের প্রস্তুতিই নিচ্ছি।’’ এরপরই তাঁর সংযোজন, ‘‘মানস ভুঁইয়া ছাড়াও যে সবংয়ে কংগ্রেস বেঁচে আছে উপ-নির্বাচনে তারই প্রমাণ মিলবে।”
সিপিএমের সবং জোনাল সম্পাদক চন্দন গুছাইতেরও বক্তব্য, “উপ-নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। গত বিধানসভায় জোট প্রার্থী হিসাবে মানস ভুঁইয়া জয়ী হয়েছিলেন। এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হবে কি না তা রাজ্য নেতারা ঠিক করবেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করে মানস ভুঁইয়া তৃণমূলে যাওয়ায় নির্বাচনে ওদের ফল ভাল হবে না।”