প্রতীকী চিত্র।
জেল থেকে এক প্রোমোটারকে ফোন করে তোলা চেয়ে হুমকি ও তাঁর গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল খড়্গপুর শহরে। সেই অভিযোগের সূত্রে আবার খড়্গপুর শহরে আবার আলোচনায় এল জেলবন্দি রেল মাফিয়া বাসব রামবাবুর নাম। রেলশহরবাসীর অভিজ্ঞতা বলছে, খড়্গপুরে ভোট এলেই মাফিয়া প্রসঙ্গ সামনে আসে। বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই তৃণমূল-বিজেপি টানাপড়েনও শুরু হয়েছে। সেই আবহেই এমন অভিযোগ রেলশহরে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। যদিও জানা যাচ্ছে, এই ঘটনায় সঙ্গে রামবাবু যুক্ত নয়। তবে তাতে অবশ্য চাপানউতোর থেমে থাকছে না।
সোমবার খড়্গপুর শহরে নিজের কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, ‘‘আমি বিধায়ক থাকাকালীন এখানে কোনও মাফিয়া ছিল না। বিধানসভা উপ-নির্বাচনে আমরা হারার পরেই মাফিয়ারাজ ও তোলাবাজি শুরু হয়েছে। পুলিশ-তৃণমূল মিলে এই মাফিয়ারাজকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। আমরা থাকাকালীন পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করে এসব নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম।” স্থানীয় বিধায়ক প্রদীপ সরকার স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল ও মাফিয়াযোগের অভিযোগ মানেননি। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘দিলীপ ঘোষ তো খড়্গপুরে আসেন না। তাহলে শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কীভাবে কথা বলছেন? একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আমরা পুলিশকে আইনানুগ পদক্ষেপ করতে বলেছি।”
অশোক তাডি নামে মালঞ্চর বাসিন্দা ওই প্রোমোটার বাসব রামবাবুর শ্যালক হিসাবে পরিচিত। যদিও বছর দশেক আগে অশোকের বোন বি মঞ্জুর সঙ্গে রামবাবুর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে অশোকের সঙ্গে রামবাবুর সম্পর্কে এখনও অবনতি হয়নি বলেই খবর। তবে এ বার সেই অশোকই বাসব রামবাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’ সহযোগী বলে পরিচিত শঙ্কর রাওয়ের বিরুদ্ধে তোলা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। শঙ্করও এখন জেলে। রবিবার সন্ধ্যায় খড়্গপুর টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন অশোক। তাঁর দাবি, ‘‘গত ৩০ অক্টোবর আমাকে ফোন করে ১০ লক্ষ টাকা তোলা চায় শঙ্কর। আমি সেই টাকা না দেওয়ায় পরদিন রাতে আমার গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে শঙ্কর ফোন করে বলেছে, ‘এটা ট্রায়াল খেলা এখনও বাকি’।”
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডু খুনের পরে রামবাবু ও তার সহযোগীরা ওই মামলায় জড়িয়ে জেলবন্দি রয়েছে। সম্প্রতি বারবার জেল থেকে তোলা চেয়ে ফোনের অভিযোগ উঠছে রামবাবুর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গত সেপ্টেম্বরেও একই অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময়ে এক জেলবন্দির নির্দেশে তোলাবাজি চালানোর অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, একসময়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ সহযোগী হলেও এখন জেলের ভিতরে শঙ্কর ও রামবাবুর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। শঙ্কর নিজের মতো করেই শহরের একাধিক ব্যবসায়ীকে ফোন করে তোলাবাজি চালাচ্ছে। সেই ইঙ্গিত দিয়ে অশোকও বলেন, “রামবাবুর সঙ্গে আমার দশ বছর ধরে কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস পূর্ব সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে উনি আমার ক্ষতি করবেন না। কারও নির্দেশে নয়, শঙ্কর নিজেই আমাকে ফোন করে তোলা চেয়ে এসব করছে।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আমহেদ বলেন, “ওই গাড়ি পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছি। জেল থেকে কীভাবে ফোন করা হচ্ছে সেই বিষয়ে জেলারকে চিঠি করা হয়েছে।”