বাধা ডিঙিয়ে ‘অটুট বন্ধন’ গড়ার কাজে প্রতিবন্ধীরা

কাঁথির ফরিদপুর বিবেকানন্দ লোকশিক্ষা নিকেতন এবং তমলুকের নিমতৌড়ি এক হোমের দৃষ্টিহীন ও মানসিক প্রতিবন্ধী পড়ুয়ার এ বছর তৈরি করছে হাজারে হাজারে রাখি। যা বাজারে বিক্রি করে উঠে আসছে তাদের পরিশ্রমের দাম। ওই সব রাখিই শোভা পাবে দাদা-ভাইদের হাতে।     

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০৭:৫০
Share:

মগ্ন: কাঁথিতে রাখি তৈরি হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

ওরা কেউ একে অন্যকে দেখেনি। থাকেও দুই আলাদা শহরে। কিন্তু তাদের শিল্পকলায় জেলার বহু মানুষই মেতে উঠবেন রাখি বন্ধন উৎসবে।

Advertisement

কাঁথির ফরিদপুর বিবেকানন্দ লোকশিক্ষা নিকেতন এবং তমলুকের নিমতৌড়ি এক হোমের দৃষ্টিহীন ও মানসিক প্রতিবন্ধী পড়ুয়ার এ বছর তৈরি করছে হাজারে হাজারে রাখি। যা বাজারে বিক্রি করে উঠে আসছে তাদের পরিশ্রমের দাম। ওই সব রাখিই শোভা পাবে দাদা-ভাইদের হাতে।

কাঁথির ফরিদপুর বিবেকানন্দ লোকশিক্ষা নিকেতনের সুমন, সৌমেন, গুরফান ও তৈবুররা কেউ কথা বলতে পারে না। আবার কেউ দেখতে পায় না। কিন্তু কল্পনার দৃষ্টি দিয়েই সকলে তৈরি করছে রাখি। ওই স্কুলের একটি ঘর এক রাখি তৈরির কারখানা। ঘরের মাঝে এক টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুঁথি, পাট, খড়, জরি, ঝিনুক, ধান, স্পঞ্জ, প্লাস্টিকের ফুল, রং, আঠা-সহ রাখি বানানোর বিভিন্ন উপকরণ। আর তা ঘিরে সুমন, তৈবুরদের ব্যস্ততা তুঙ্গে।

Advertisement

শেখ তৈবুরের কথায়, “আমাদের তৈরি রাখি বাজারে বিক্রি হবে। বহু মানুষ কিনবে। একে অন্যকে পরাবে। এটা ভাবতেই খুব ভাল লাগছে।’’ ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার রাখি বানিয়ে ফেলেছে তারা। সেগুলি বাজারে বিক্রিও হচ্ছে রমরমিয়ে।

বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তাপস জানা বলেন, “এরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। ওই রাখি তৈরির শিক্ষা ওদের আগামিদিনে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করবে। ছাত্রছাত্রীদের তৈরি রাখি বিক্রি করে যা আয় হয়, তা তাদেরই বিভিন্ন উন্নয়নের কাজে লাগে।’’

নিমতৌড়ির এক আবাসিক হোমেও একই ছবি। সেখানে গত এক মাস ধরে নাওয়াখাওয়া ভুলে রাখি তৈরিতে ব্যস্ত পার্বতী, পম্পা, মীরা, গঙ্গা, সবিতারা। কোনও সরকারি উদ্যোগ ছাড়াই, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ, কন্যাশ্রীর বার্তা দেওয়া প্রায় ১০ হাজার রাখি তৈরি করেছে নিমতৌড়ি ওই প্রতিবন্ধী হোমের প্রায় ৪০ জন ছাত্রী। যাদের মধ্যে অধিকাংশই মূক। মুলত পাট দিয়েই তৈরি হচ্ছে এই রাখি। আর তা সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে রেশমী ফিতে, পুঁতি প্রভৃতি।

ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণের কাজে নিযুক্ত হোমের কণিকা, অনিমাদি, মধুমিতাদিরা বলেন, ‘‘২০০৪ সাল থেকে আবাসিকেরা রাখি বানাচ্ছে। প্রতি বছরই বেড়েছে রাখি তৈরির সংখ্যা।’’ হোম সূত্রের খবর, তাদের বানানো একটি মাঝারি সাইজের রাখির দাম ১০ টাকা। এ বছর প্রায় ১০ হাজার রাখি বিলি করা হবে জেলার ২০টি সরকারি হোমের আবাসিকদের মধ্যে। এদের মধ্যে ৯টি মহিলা হোমে পাঠানো হবে কন্যাশ্রী রাখি। এছাড়া, জেলার সব ক’টি থানা, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে পাঠানো হবে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ রাখি। আর ১৫ হাজার রাখি সাধারণ মানুষের জন্য বিক্রি করা হবে তমলুক শহরের বিভিন্ন জায়গায় স্টল তৈরি করে। নিমতৌড়ির ওই হোমের সম্পাদক যোগেশ সামন্ত বলেন, “এ বছর ২৫ হাজার রাখি বানানোর লক্ষ্য নিয়েছে মেয়েরা। যা রোজগার হবে, জমা পড়বে ওই মেয়েদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement