ক্ষতিগ্রস্ত: সবংয়ের ধানজমিতে। নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েকের ঝড়বৃষ্টিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রচুর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক হিসেব, প্রায় ৮৮,৫৩৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো ধানেরই। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৭০,৮৯৩ হেক্টরের বোরো ধান। প্রশাসন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কারণ, ইতিউতি এখনও অনেক জমিতে জল জমে রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট জেলা থেকে রাজ্য কৃষি দফতরে পাঠানো হয়েছে।
জেলার কৃষি আধিকারিক প্রভাত বসু মানছেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টিতে বেশ কিছু এলাকায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরির স্বীকারোক্তি, ‘‘কালবৈশাখীতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা খুব কম নয়। বরং কিছু এলাকায় বেশিই।’’ জেলার কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরে বোরো ধান হয়েছিল ২,০৩,৪২৭ হেক্টর জমিতে। প্রাথমিক হিসেব, এরমধ্যে প্রায় ৭০,৮৯৩ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, জেলার সবমিলিয়ে ৩,০৫০টি মৌজায় চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈশাখের এই সময়ে সব রকমের ফসলে মাঠ ভরে ওঠে। মাঠে থাকে বোরো ধান থেকে হরেক রকমের আনাজ। ফুল, ফুলও। দিন কয়েকের ঝড়বৃষ্টিতে পাকা ধান নুইয়ে পড়েছে মাঠে। আনাজ খেতে জল জমেছে। ফলে, মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। মেদিনীপুর গ্রামীণের গোপাল বেরার কথায়, ‘‘লকডাউন চলছে। খেতের ফসল বিক্রি করে যেটুকু পয়সা আসবে বলে ভেবেছিলাম, তা-ও কেড়ে নিল কালবৈশাখী।’’ লকডাউনে ফসল পরিবহণে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও ছোট চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন। তাঁরা এখন ফসল ঠিক মতো পাঠাতে পারছেন না। ধান কাটার লোক মিলছে না। এই অবস্থায় কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টি তাঁদের আরও সমস্যায় ফেলে দিয়েছে।
এই সময়ে উচ্ছে, পটল, বেগুন, লাউ, কুমড়ো প্রভৃতিতে ভরে থাকে ফসলের খেত। কালবৈশাখীর দাপটে মাঠের আনাজের একটা অংশ আর বাজারে নিয়ে যেতে পারবেন না চাষিরা। জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলায় ১৩,২৫৪ হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়েছিল। প্রাথমিক হিসেব, এর মধ্যে প্রায় ২,০০০ হেক্টর জমির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছের গোড়ায় জল জমেছে। জল দ্রুত বার করা না গেলে ফসল পচে যাবে। সর্বত্র দ্রুত জল বের করা সম্ভবও হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি, ব্লকগুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসেব- নিকেশের কাজ সেরে ফেলার কথা জানানো হয়েছে।