তৃণমূলের কিসান ও খেতমজুর সংগঠনের সম্মেলনে পূর্ণেন্দু বসু। নিজস্ব চিত্র
নিয়োগে দুর্নীতি কাঁটায় বিদ্ধ তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে শাসকদলের নেতা পূর্ণেন্দু বসু দাবি করলেন, দলেরই একাংশ সার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে যে মা-মাটি-মানুষের কৃষক সমর্থনের ভিত নড়তে পারে, আশঙ্কা পূর্ণেন্দুর।
তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার কিসান ও খেতমজুর সংগঠনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন হয়ে গেল দাসপুরে। সবুজ সঙ্ঘের মাঠে ওই সম্মেলনে কৃষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পূর্ণেন্দু সারের কালোবাজারি কার্যত মেনে নেন। পূর্ণেন্দুকে বলতে শোনা যায়, “কালোবাজারি রুখতে সংগঠনকে রাস্তায় নামতে হবে। দলের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু ব্যবসায়ীর এর সঙ্গে যুক্ত। তাই তাদের পাশে না থেকে চড়া দাম নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি কৃষকদের পাশে না থাকি, তা না হলে দলের প্রতি খারাপ বার্তা যাবে।” দাসপুরের প্রকাশ্য সভায় পূর্ণেন্দু মনে করিয়ে দেন, “কৃষক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দল ক্ষমতায় এসেছিল। কৃষকদের সমর্থন ছাড়া দল টিকবে না। কৃষকরা যদি একবার মনে করে দল তাদের পাশে নেই, তৃণমূল তাদের স্বার্থ দেখছে না, তা হলে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ খারাপ।”
পূর্ণেন্দুর এই মন্তব্যের সূত্র ধরে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধছে সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য পুলিনবিহারী বাস্কের কটাক্ষ, ‘‘একসময় বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় শিলাদিত্য চৌধুরী নামে এক যুবক সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তোলায় জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। এখন মুখ্যমন্ত্রীর দলের নেতাই বলছেন, সারের কালোবাজারির সঙ্গে তাঁদেরই অনেকে যুক্ত। এই সরকার যে কৃষক দরদি নয়, তা ফের একবার প্রমাণ হল।’’
কৃষকদের অভিযোগ, সারের বস্তায় সর্বোচ্চ মূল্য (এমআরপি) থাকা সত্বেও অনেক সময় সেই মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া হয়। চাষিরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা অনেকসময় ইচ্ছে করে মজুত থাকা সত্বেও প্রয়োজনীয় সার অমিল বলে দেন, চাষিরা ফসল বা আনাজ বাঁচাতে সেই সার হন্যে হয়ে খোঁজেন। সেই চাহিদার সুযোগে সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়েও বেশি দামে সার বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। উপয়ান্তর না থাকায় চাষিরা তা কিনতে বাধ্য হন। এ ছাড়া বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী বেশি দামে সার বিক্রি করেন খুচরো সার দোকানদারদের। সেই দোকানদার আরও দাম চাপিয়ে বিক্রি করেন। অনেকসময় বড় চাষিরা বেশি পরিমাণে সার কিনে, গ্রামের ছোট চাষিদের কাছে বিক্রি করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সারের কালোবাজারি নিয়ে সরগরম হয়েছে রাজনীতি। পথে নেমেছে বিরোধীরা। শাসক দলের অন্দরেও উঠেছে আওয়াজ। তবে সে ক্ষেত্রে বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কিসান খেতমজুর সেলের সভাপতি শ্যামসুন্দর শতপতি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত নীতির জন্য সারের কালোবাজারি বাড়ছে।’’
তবে পূর্ণেন্দু সারের কালোবাজারিতে তৃণমূলের জড়িয়ে থাকার কথা স্বীকার করে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলেরই অস্বস্তি বাড়ালেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এ দিন শালবনিতেও তৃণমূলের কিষান খেতমজুর সংগঠনের এক সভা হয়েছে। সেখানেও গিয়েছিলেন পূর্ণেন্দু।