আলিফ-হাসিনার বিয়ের কার্ড।
বিয়ে মানে নতুন সম্পর্কের শুরু। প্রেম-ভালবাসার বাঁধনে সম্পর্ক উদ্যাপনও বটে।
তাই বিয়ের আমন্ত্রণপত্রেই নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এআরসি), যা নাকি ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল ধরাতে চাইছে বলে অভিযোগ, তার প্রতিবাদ জানালেন কেশপুরের মহম্মদ আলিফ। লাল টুকটুকে বিয়ের কার্ডে বার্তা দিলেন, ‘নো এনআরসি, নো সিএএ।’
বছর সাতাশের আলিফ পেশায় রেশন ডিলার। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের মুগবসানে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। পাত্রী হাসিনা মমতাজের বাড়ি কেশপুরেরই কিসমৎ আঙ্গুয়ায়।
হঠাৎ এমন অভিনব প্রতিবাদের ভাবনা এল কী ভাবে?
আলিফ বলছেন, ‘‘দেশ জুড়েই প্রতিবাদ হচ্ছে। ভেবেছিলাম এই প্রতিবাদের পরিসর আরও বাড়ানো দরকার। বিয়ের কার্ডে সেই বার্তা পরিজন-পরিচিতদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি।’’ আলিফ কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে নতুন নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রতিবাদে গোড়া থেকেই পথে নামছেন তিনি। কেশপুরের এই যুবক বলছিলেন, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যা করছে তার বিরুদ্ধে আমরা গোড়া থেকেই প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার মনে আছে, যে দিন সংসদে সিএএ পাশ হল, সে দিনই আমরা গ্রামের কয়েকজন মিলে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছি। পরেও এমন অনেক কর্মসূচি করেছি। সবই অরাজনৈতিক প্রতিবাদ।’’
আলিফের এমন অভিনব প্রতিবাদকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন তাঁর পরিজন-পরিচিতেরা। পাশে রয়েছেন হবু স্ত্রী হাসিনা মমতাজও। বিয়ের কার্ডে ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’ বার্তার ঠিক নীচেই উজ্জ্বল আলিফ-হাসিনার জোড়া নাম। মমতাজের সঙ্গে কথা বলেই বিয়ের কার্ডে এমন বার্তার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন আলিফ।
মমতাজও মানলেন সে কথা। বললেন, ‘‘আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। দীর্ঘ দিনের সেই ঐতিহ্যের গায়ে ঘা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সে জন্যই তো ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ সকলে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। আমরা না হয় এ ভাবেই প্রতিবাদ জানালাম।’’