ঘাটাল শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের মূল নিকাশীর জল এসে পড়ে গোবিন্দপুরে এই খালে । অথচ এইটি সংস্কার করা হয়নি । —নিজস্ব চিত্র।
বৃষ্টি হলেই হয় শহরে বয়ে চলে জলধারা। না হলে দাঁড়িয়ে যায় নোংরা জল। কোথাও আবার রাস্তার নোংরা জল ঢোকে শোওয়ার ঘরে। সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় দুই জেলার ছোট, বড়, মাঝারি সব শহরেই বর্ষাকালে দেখা যায় প্রায় একই ছবি। পরিণতি এক হলেও শহর ভেদে বেহাল নিকাশির কারণ ভিন্ন।
ঘাটাল শহরকে দু’ভাগ করে বয়ে চলছে শিলাবতী নদী। তার জেরে শহরের একটি অংশ অর্থাৎ পশ্চিম পাড় নদীতল থেকে নীচু। শহরের অন্য প্রান্ত অর্থাৎ পূর্ব পাড়টি আবার বেশ অনেকটা উঁচু। সবমিলিয়ে একই জনপদে নিকাশির সমস্যা দু’রকমের। এই পরিস্থিতিতে সারা বছর শহরের এক প্রান্তে নিকাশি নালার যাবতীয় দূষিত জল এলাকাতেই ঘোরাফেরা করে। বন্যা হলে যাবতীয় নোংরা ভেসে যায়। দূষণ মুক্ত হয় শহর। তার কারণ, ঘাটাল পুর এলাকার বারোটি ওয়ার্ডে নিকাশি নালার জলকে অন্যত্র নিয়ে ফেলার আলাদা কোনও ব্যবস্থা নেই। শহরের কৃষ্ণনগর থেকে থানাগোড়া, আলামগঞ্জ হয়ে বয়ে চলা খালেই ওই নোংরা এসে জমা হয়। বাসিন্দাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত সমস্ত নোংরা ও ড্রেনের জল ওই সব খালে গিয়ে পড়ে। অন্যদিকে শহরের পূর্ব পাড়ে আবার একটু ভারী বৃষ্টি হলেই নালার নোংরা জল শোওয়ার ঘরে ঢুকে যায় বলে শহরবাসীর অভিযোগ। সমস্যা সাময়িক ভাবে মেটাতে পূর্ত দফতর ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়ক সম্প্রসারণের সময় একটি পাকা নিকাশি নালা তৈরি করেছিল। সেই নালাই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ওই সড়কের দু’ধারের জমি দখলের পাশাপাশি পাকা সেই নালা দখল করেও গজিয়ে উঠেছে বেআইনি নির্মাণ।সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পর ঘাটালে নালাগুলি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান তুহিনকান্তি বেরা বলেন, “ঘাটালে নিকাশি নালা ও খালগুলি সংস্কারের কাজ চলছে।”
মেদিনীপুর শহরে আবার বর্ষায় ভোগান্তির আশঙ্কা করছে শহরবাসী। মজে গিয়েছে শহরের খালের একাংশ। বেশ কিছু নালাও। নিকাশি খাল, নালা বেশ কয়েক মাস সংস্কার হয়নি। বৃষ্টিতে জলমগ্ন হতে পারে শহরের বিভিন্ন এলাকা। তার জেরে ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে শহরবাসীকে। পুরসভার অবশ্য দাবি, বর্ষার আগেই খাল, নালা সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের কাজ শুরুও হয়েছে। পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, ‘‘খাল, নালা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। দ্বারিবাঁধ খাল সংস্কার শুরু হয়েছে। যন্ত্র দিয়ে খালে জমে থাকা আবর্জনা তোলা হচ্ছে। আসন্ন বর্ষায় যাতে এলাকা সামান্য বৃষ্টিতে জলমগ্ন না হয়, তার জন্য নিকাশি নালা সংস্কার করা হচ্ছে।’’ পুরসভা সূত্রের দাবি, এলাকার কোন কোন নিকাশি নালার আশু সংস্কার প্রয়োজন, পুর- প্রতিনিধিদের কাছে তা জানতেও চাওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ হবে।
খড়্গপুরে রেলের জলে শহরের পুর এলাকা ভাসে বলে দাবি করে রেলশহরের পুরসভা। দীর্ঘ এক দশকের বেশি শহরে মাস্টার প্ল্যান গড়ার পরিকল্পনা হলেও তা বাস্তবায়নের পথে এগোতে পারেনি পুরসভা। এর জেরে প্রতি বর্ষায় শহরের বহু ওয়ার্ডে জলমগ্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়। খোদ পুরসভার সামনের রাস্তা জলে ডুবে যায়। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা এমন ঘটনায় শহরের মধ্যভাগে থাকা রেল এলাকার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। যদিও বিরোধীদের দাবি, শহরের ১, ২, ৩, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ২৪, ২৫, ২৮, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল নিকাশির সমস্যা থাকায় জমা জল বেরোতে পারে না। বহু এলাকায় নেই নিকাশি নালা। বড় নর্দমাগুলি মজে যাওয়ায় বর্ষায় সমস্যা আরও বাড়ে। পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “রেলের জল এসে আমাদের পুর এলাকা ভাসিয়ে দেয়। আমরা তার পরেও বহু চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ায় এ বার যাতে কোথাও জল না দাঁড়ায় তার জন্য আমরা শহরের সমস্ত বড় নালা ক্রেন দিয়ে পরিষ্কার করছি। একইসঙ্গে গলিপথেও সমস্ত ছোট নালা শ্রমিক লাগিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে।”
অরণ্য শহরে নিকাশি নালা গুলি হঠাৎ শুরু, হঠাৎ শেষ। সেই নিকাশিনালার উদ্দেশ্য বা ফলই কি শহরবাসীর কাছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। ১৮টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট ২১ বর্গকিমি আয়তনের পুরশহরে এখনও সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থাটাই গড়ে তোলা যায়নি বলে অভিযোগ। সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের কেন্দ্রস্থল পাঁচ মাথা মোড় সহ বেশির ভাগ এলাকায় রাস্তা উপচে জল দাঁড়িয়ে যায়। নিচু এলাকা গুলি জলে ভাসে। ক্ষমতায় থাকাকালীন বামেরা প্রতি বছর নিকাশির জন্য মাস্টার প্ল্যানের প্রতিশ্রুতি দিত। একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৩ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। কিন্তু নিকাশি নিয়ে কোনও মাস্টারপ্ল্যানই হয়নি। শহরবাসীরও অভিযোগ, ২০১৩-১৮ সালে এই পাঁচ বছরে পরিকল্পনাবিহীন ভাবে যেখানে সেখানে কিছু পাকা নালা তৈরি হয়েছে। তাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ বলেন, ‘‘দুটি হাইড্রেন কাজ শেষ হলে নিকাশী সমস্যা অনেকটা মিটবে।এছাড়াও শহরে ২৪টি ড্রেন তৈরি হবে।’’
তথ্য: কিংশুক গুপ্ত,রঞ্জন পাল, বরুন দে,দেবমাল্য বাগচী ও অভিজিৎ চক্রবর্তী