রাজবাড়ির সামনে রাজ পরিবারের সদস্য তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী সমরজিৎ সিংহদেব। গড়বেতার মঙ্গলাপোতায়। নিজস্ব চিত্র
রাজনীতির অলিন্দে রাজ পরিবার! ভোটে জিতে সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেন রাজ পরিবারের এক সদস্য।
গড়বেতার মঙ্গলাপোতা রাজ পরিবারের সদস্য সমরজিৎ সিংহদেব এ বার ভোটে জিতে পঞ্চায়েতের সদস্য হয়েছেন। তৃণমূল প্রার্থী সমরজিৎ হারিয়েছেন রাজ পরিবারের আর এক সদস্য বিজেপি প্রার্থী সমীরকুমার সিংহদেবকে। সম্পর্কে তাঁরা কাকা-ভাইপো। জয়ের ব্যবধান ১০৫২। রাজনীতির ময়দানে এ বারই প্রথম মঙ্গলাপোতা রাজ পরিবারের কোনও সদস্য। ভোটপর্ব মিটতে দু’জনেই বলছেন রাজনীতি প্রভাব ফেলবে না রাজ পরিবারের অন্দরে।
খড়কুশমা গ্রাম পঞ্চায়েতের মঙ্গলাপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩৭ নম্বর গ্রাম সংসদ আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল রাজ পরিবারের সদস্য বছর আটত্রিশের তরুণ সমরজিৎ সিংহদেবকে। তিনি মঙ্গলাপোতা রাজ পরিবারের বর্তমান ‘রাজা’ অরবিন্দ সিংহদেবের পুত্র। সেই রাজত্ব বা রাজ বৈভব না থাকলেও বংশ পরম্পরায় পরিবারের বয়ঃজ্যেষ্ঠকেই ‘রাজা’ বলে মানেন পরিবারের সকলে। অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী করেছিল রাজ পরিবারের প্রবীণ সদস্য সমীরকুমার সিংহদেবকে। যিনি বর্তমান ‘রাজা’র ভাই, তৃণমূল প্রার্থী সমরজিতের কাকা।
বগড়ির আদি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা গজপতি সিংহ। সেই রাজত্বের তৃতীয় রাজবংশ শুরু হয় ১৭২০ সালে বীর শমশের বাহাদুরের হাত ধরে। সেই সময় তিনি গড়বেতার সিংহাসন দখল করে মঙ্গলাপোতায় পৃথক এক রাজবাড়ি স্থাপন করেছিলেন। সেই রাজ পরিবারের সদস্যেরা এখনও রয়েছেন মঙ্গলাপোতায়, রয়েছে ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো রাজবাড়িও। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রথমবার রাজ পরিবারের দুই সদস্য কাকা-ভাইপোর দ্বৈরথ জমে উঠেছিল এ বারের ভোট প্রচারে। ভোটের দিনে বুথে উত্তেজনা থাকলেও, দুই প্রার্থীকেই নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের সামলাতে দেখা গিয়েছে। ভোটের ও গণনার দিন ছাড়া রাজ পরিবারে উত্তেজনার তেমন আঁচ পড়েনি। বড় ব্যবধানে জিতে ভাইপো সমরজিৎ প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়েছেন কাকার। রাজ পরিবারের সদস্য সমরজিৎকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা।
ভোট যুদ্ধ শেষে মঙ্গলাপোতা রাজ পরিবারের এই দুই সদস্য বলছেন রাজনীতি প্রভাব ফেলবে না রাজ পরিবারের অন্দরে। কিন্তু ভোট নিয়ে দু’পক্ষকে বিঁধতে ছাড়েননি কেউই। জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সমরজিৎ বলছেন, ‘‘প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়ে টেনশন হচ্ছিল, তবে এত মানুষের সমর্থন পাব জানতাম না। মঙ্গলাপোতার মানুষ শান্তিতে অবাধে ভোট দিয়ে আমাকে জেতানোয় তাঁদের ধন্যবাদ।’’ অন্য দিকে, পরাজিত বিজেপি প্রার্থী সমীরকুমার সিংহদেব বলছেন, ‘‘অবাধ ভোট হলে ফলটা উল্টে যেত। আমিই জিততাম।’’ তাঁর পুত্র বিজেপির গড়বেতা পূর্ব মণ্ডলের সভাপতি তুষার সিংহদেব বলছেন, ‘‘ভোটের ফল যাই হোক, রাজ পরিবারের সম্পর্কের বন্ধন অটুট।’’ স্থানীয় বাসিন্দা ব্লকের তৃণমূল নেতা অসীম সিংহরায় বলেন, ‘‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে মানুষের সমর্থন নিয়ে রাজ পরিবারের এক সদস্য যুক্ত হয়ে পড়লেন। তাঁকেঅনেক অভিনন্দন।’’