প্রতিদিন ৩০ লক্ষ ডিম উৎপাদন হয় এই জেলায়।
শীতের বাজারে হরেকরকম আনাজ। কিন্তু তাতে হাত দিলেই লাগছে ছেঁকা। রোজকার রুই-কাতলার পাশাপাশি ডিম আর ভাতই ছিল ভরসা। কিন্তু দাম বাড়ছে ডিমেরও।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ডিম উৎপাদনে রাজ্যের সেরা। এই জেলাতেই ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬ টাকা দরে। কলকাতা বা অন্য জেলার সঙ্গে ডিমের দরের কোনও ফারাক নেই কেন? শুধুমাত্র পরিবহণ খরচের বিষয়টি জুড়লেও তো সামান্য হলেও দামের হেরফের হওয়া উচিত। জেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের অধিকর্তা তুষারকান্তি সামন্ত জানালেন, ডিমের দাম পোলট্রি ফেডারশন থেকেই নির্ধারিত হয়। রাজ্য পোলট্রি ফেডারেশন অবশ্য এই দামকে অন্যায়ের কিছু দেখছে না। তাদের বক্তব্য, ডিমের পাইকারি দর ওঠানামা করে। এখন দর পাঁচ টাকা দশ পয়সা। ক্রেতাদের দর সাড়ে পাঁচ টাকা। পোলট্রি ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মদন মাইতির কথায়, “ছ’টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে। তবে এর বেশি হওয়ার কথা নয়। ডিমে কোনও কালোবাজারি নেই।” পোলট্রি ফেডারশনের দাবি, ডিমের কালোবাজারি নেই। যদিও গড়ে ৬টা দরে বিক্রি হলেও কেউ কেউ সুযোগ বুঝে জুড়ে দিচ্ছেন অতিরিক্ত ৫০ পয়সা।
প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রতিদিন ৩৩ লক্ষ ডিম উৎপাদন হয়। জেলায় দৈনিক চাহিদা ১৯ লক্ষ ডিম। ১৪ লক্ষ ডিম বাড়তি হয়। সেগুলি পড়শি হুগলি, হাওড়া, তমলুক, কলকাতা সহ প্রভৃতি জায়গায় চলে যায়। জেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৫৫-৬০টির মতো মুরগি ফার্ম রয়েছে। সেখানে মোট ৪২ লক্ষ মুরগি চাষ হয়। ফড়েরা সরাসরি চাষি ও ফার্ম থেকে ডিম সংগ্রহ করেন।
মুরগি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একটি মুরগিকে ছোট থেকে ডিম পাড়ার উপযুক্ত করতে দুশো পঞ্চাশ থেকে তিনশো টাকা খরচ পড়ে। এ বছর ভুট্টার দাম বেশি থাকায় খরচ বেড়েছে। তা না হলে ১৮০ টাকা খরচ হয়। ছ’মাসের পর থেকে টানা এক বছর ডিম দেয় একেকটি মুরগি। বছরে ৩৩০টি ডিম পাওয়া যায়। আরও খরচ রয়েছে। খামার থেকে ডিম সংগ্রহ। ডিম পাড়ার সময় মুরগির প্রতিদিনের খাবার খরচ।
এ ছাড়াও রয়েছে ওষুধের খরচ। ডিম দেওয়া হয়ে গেলে সেই মুরগি মাংস হিসাবে বিক্রি হয়। একেকটি ডিম উৎপাদনে চার টাকার উপরে খরচ পড়ে। পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় পাঁচ টাকার আশেপাশে। বাজারে আসতে আসতে যোগ হয় আরও একটাকা। জেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের অধিকর্তা তুষারকান্তির কথায়, ‘‘এখন সাড়ে পাঁচ টাকার বেশি দাম হওয়ার কথা নয়।”