বল্লুক-১ পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
আশঙ্কা ছিল। সোমবার সেই আশঙ্কা সত্যি করেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় আবাস প্লাস যোজনার উপভোক্তা তালিকা অনুমোদনের গ্রাম সভায় হল বিক্ষোভ। কোথাও কোথাও আবার হেনস্থার শিকার হলেন খোদ বিডিও।
২০১৮ সালে আবাস প্লাস প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সম্প্রতি সেই তালিকা ধরে সরকারি বিভিন্ন শর্ত মেনে প্রশাসনিক তদন্তের পর উপভোক্তাদের অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই অগ্রাধিকার তালিকা প্রতি পঞ্চায়েতে সভা ডেকে অনুমোদন করতে হবে। তার পরে তৈরি হবে আবাস প্লাসের চুড়ান্ত উপভোক্তা তালিকা। পূর্ব মেদিনীপুরে এ দিন গ্রাম সভা ছিল। দুপুরে নোনাকুড়ি বাজারের সংলগ্ন বল্লুক-১ পঞ্চায়েত অফিসে ওই সভায় হাজির ছিলেন প্রায় ৩০০ জন এলাকাবাসী। ছিলেন বিডিও অমিত গায়েন, পঞ্চায়েত প্রধান শরৎ মেট্যাও। পঞ্চায়েতের সহায়ক উপভোক্তাদের অগ্রাধিকার তালিকা পড়তে শুরু করলে দেখা যায়, পুরনো আবাস প্লাস তালিকার ৭৭৮টি পরিবারের মধ্যে ৪৪৬টি পরিবারের নাম রয়েছে। এর পরেই সভায় উপস্থিত বহু বাসিন্দা দাবি করেন, তাঁরা পাকাবাড়ি পাওয়ার উপযুক্ত হলেও তালিকায় নাম নেই। তাঁরা বিডিও এবং পঞ্চায়েত প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিডিও’কে হেনস্থা করার পাশাপাশি, অফিসের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরের চেষ্টাকরা হয়।
পরিস্থিতির সামাল দিতে তমলুক থানার পুলিশকে ডাকা হয়। পুলিশ ও র্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। সভায় উপস্থিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য তথা এসইউসি নেতা প্রশান্ত ঘড়ার অভিযোগ, ‘‘তালিকায় প্রচুর অসঙ্গতি থাকায় বাসিন্দারা ক্ষুদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’’ যদিও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার পঞ্চায়েত প্রধান শরৎ বলেন, ‘‘যদি কারও অভিযোগ জানানোর থাকে, তা জানাতে পারতেন। কিন্তু বিরোধীদের উস্কানিতে সভায় কয়েকজন বাসিন্দা অশান্তি করেছেন।’’ বিডিও অমিত গায়েন বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখব। তবে ব্লকের বাকি সমস্ত পঞ্চায়েতে নির্বিঘ্নে গ্রামসভা হয়েছে।’’
চণ্ডীপুর ব্লকের ব্রজলালচক, বৃন্দাবনপুর-২ পঞ্চায়েত এবং ময়না ব্লকের পরমানন্দপুর পঞ্চায়েত ব্রজলালচক পঞ্চায়েত অফিসে গ্রামসভা চলাকালীন বিজেপি সমর্থক গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখান। বিডিও ও পুলিশ বাহিনী সেখানে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেন। ময়নার পরমানন্দপুরে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের সাথে গোলমাল বাঁধে। সে সময় এক বিজেপি সমর্থককে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক ছাড়াও ভগবানপুর-১, নন্দীগ্রাম ২, খেজুরি-১ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় গ্রাম সভায় অশান্তি হয়েছে। ভগবানপুর-১ ব্লকে গুড়গ্রাম পঞ্চায়েতে সভা ডাকা হয়েছিল। বিজেপির দাবি, এ ব্যাপারে এলাকায় মাইকরে করে সাধারণ মানুষকে জানানো হয়নি। এছাড়া, সভায় সমীক্ষায় উপভোক্তা তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা শুরু হতেই ব্যাপক বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এখানেও পঞ্চায়েতের কর্মী এবং বিডিও-র প্রতিনিধিকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এর প্রতিবাদ করায় তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের হাতাহাতি বেঁধে যায়। হাতাহাতিতে এক বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি। তাঁকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি স্বপন রায় বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের পাকা বাড়ি রয়েছে। তা সত্ত্বেও তালিকায় নাম রয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় আমাদের এক কর্মীকে মারধর করেছে তৃণমূল।’’ এগরা বিবেকানন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতেও একই অভিযোগে গ্রাম সংসদ সভায় বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। বিক্ষোভ হয় খেজুরি-১ ব্লকের নিজকসবা অঞ্চলেও।
নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের আমদাবাদ-১ পঞ্চায়েতের গ্রাম সভায় অবশ্য গন্ডগোলের আঁচ পেয়ে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়ন ছিল। গ্রামসভা শুরু হতেই প্রধান শ্রাবণী হাজরা গায়েনকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। তবে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকায় গন্ডগোল বড় আকার নেয়নি। এ ব্যাপারে নন্দীগ্রাম-২ এর বিডিও অখিলেশ সাহা অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও বিক্ষোভ হয়নি। সভায় ওঠা অভিযোগগুলি নথিভুক্ত করা হয়েছে।’’