বিদ্যুতে ক্ষতি ৫৬ কোটি!

এক মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭০ লক্ষ টাকা। টাকার অঙ্কে জেলায় মাসে ক্ষতির বহর ৫৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৬৮০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০৯:০০
Share:

নিজস্ব চিত্র

এ যেন ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি!

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মাসে গড়ে ১৪০.২৫ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এরমধ্যে বিল আদায় হয় গড়ে ৫৯ মিলিয়ন ইউনিটের!

এক মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭০ লক্ষ টাকা। টাকার অঙ্কে জেলায় মাসে ক্ষতির বহর ৫৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৬৮০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা!

Advertisement

দফতরের এক সূত্রে খবর, জেলায় ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ হলে মাত্র ৪২ শতাংশ ইউনিটের বিল আদায় হয়। বাকি ৫৮ শতাংশ ইউনিটের বিল আদায় হয় না। টাকার অঙ্কে বছরে প্রায় ৬৮০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। জেলার কেশপুর, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুর, ডেবরা, মেদিনীপুর সদর ব্লকে হুকিংয়ের জেরে ক্ষতির বহর বেশি বলে বিদ্যুৎ দফতরের এক সূত্রে খবর।

বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ক্ষতির বহর কমিয়ে আয় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, তারপরেই নড়েচড়ে বসেছেন দফতরের কর্তারা। বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার চিরঞ্জীব বন্দোপাধ্যায় বলেন, “রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার ও গ্রাহক পরিষেবা মেলাও রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযানে নামা হবে। ‘রিডিং বিলিং’-এর কাজে যুক্ত কর্মীদের গাফিলতি চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” চিরঞ্জীববাবু আরও বলেন, “পরিস্থিতি বদলে গোপনে নাম নথিভুক্তি চলছে। নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের বাড়িতে বিল পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা জমা না দিলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”

প্রতি মাসে শুধু ঘাটাল মহকুমাতেই ২৭ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের মধ্যে অপচয় হয় ১৩ মিলিয়ন ইউনিট! গোটা ঘাটাল মহকুমায় মোট ২৭ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের মধ্যে ১৪ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের বিল পাঠানো হয়। অভিযোগ, বাকি ১৩ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের মধ্যে হুকিংয়ের জেরে প্রতি মাসে ৯ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যায়। এর জেরে টাকার অঙ্কে ক্ষতির বহর প্রতি মাসে ৬-৭ কোটি টাকা। এ ছাড়াও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল তো আছেই। তার পরিমাণও গড়ে ৩-৪ কোটি টাকা। অবস্থা এমন যে হুকিং রুখতে অভিযানে গিয়ে কর্মী-আধিকারিকদের মার খাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ, মহকুমার ওই সব গ্রামের ৫০-৬০ ভাগ পরিবারই হুকিং করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। চুরি করা বিদ্যুতে আলো-পাখা তো চলেই, চলছে রেফ্রিজারেটর, টিভি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও। হুকিং রুখতে ইদানীং বিদ্যুৎ দফতর অ্যালুমিনিয়ামের তার ফেলে কেবল তারের ব্যবহার শুরু করেছে। তাতেও ঠেকানো যাচ্ছে
না হুকিং।

বিদ্যুৎ চুরির প্রবণতা রয়েছে জেলার খড়্গপুর-২ ও ডেবরা ব্লকেও। বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ হবে কীভাবে? খড়্গপুরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার তন্ময় মহাপাত্র বলেন, “বিদ্যুৎ চুরির প্রবণতা সর্বত্র রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি গৃহস্থ বাড়ি ও ছোট ব্যবসা ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। আসলে অসচেতনতার জেরেই এখনও বিদ্যুৎ চুরি বাড়ছে। আমরা তাই সচেতনতা বাড়ানোর উপর
জোর দিচ্ছি।”

(তথ্য: অভিজিৎ চক্রবর্তী,
বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement