বিক্রির আশায়। নন্দকুমারের ঠেকুয়াচকে কুমোরপাড়ায়।
প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোর আগে মাটি তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন স্বপন পাল, সুদর্শন পাল। নন্দকুমারের ঠেকুয়া বাজার এলাকার কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা মাটির হাঁড়ি, কলসি, সরা, প্রদীপ ও ধুনুচি-সহ পুজোর প্রয়োজনীয় মাটির জিনিস তৈরির কাজে দম ফেলার ফুরসত থাকত না। কিন্তু সব বদলে গিয়েছে করোনা আবহে। বিশ্বকর্মা আর মহালয়া এ বার একই দিনে। তারপর দুর্গাপুজো। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এখনও পুজো নিয়ে অনিশ্চয়তা না কাটায় পুজোর জন্য প্রয়োজনীয় এই সব মাটির সামগ্রীর চাহিদা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তেমন অর্ডার না আসায় হাতে কাজ নেই স্বপন, সুদর্শনের মতো মৃৎশিল্পীদের। বিশ্বকর্মা পুজোর বেশি দেরি নেই। তবু ব্যস্ততা নেই নন্দকুমারের ঠেকুয়াবাজার লাগোয়া কুমোরপাড়ায়। কাজ না থাকায় আর্থিক অনটনের মুখে পড়েছেন ঠেকুয়াচক গ্রামের ১৫টি মৃৎশিল্পী পরিবার। মৃৎশিল্পী স্বপন পাল বলছিলেন, ‘‘এখন মাটির হাঁড়ি-কলসী, প্রদীপ, ঘট, ধুনুচি-সহ পুজোর সামগ্রীর চাহিদা কমলেও বিয়ে-সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য মাটির থালা, গেলাস-সহ বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা থাকে। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে বিয়ে-সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান কম হওয়ায় বাজারে ওই সব সামগ্রীর চাহিদাও কমেছে। হাতে বরাত না পাওয়ায় খুবই আর্থিক
সঙ্কটে পড়েছি।’’
মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরি ও বাজারে গিয়ে সেইসব সামগ্রীর ব্যবসা করেন প্রবীণ মৃৎশিল্পী সুদর্শন পাল। তাঁর কথায়, ‘‘৫০ বছর ধরে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করছি। পাড়ার মৃৎশিল্পীদের কাছ থেকেও মাটির জিনিসপত্র কিনে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতাম। প্রতি বছর পুজোর আগে এই সময় তমলুক শহর, নন্দকুমার, কালীরহাট, শ্রীরামপুর সহ বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্ডার পেতাম। এ বার করোনা পরিস্থিতির জন্য পুজোর আগে সে ভাবে অর্ডার আসেনি। পুজোর মরসুমে মাটির সামগ্রীর চাহিদা না বাড়লে অভাব-অনটনের মুখে পড়ব।’’ এই অবস্থায় সরকারি সাহায্যের আশায় রয়েছেন তাঁরা।
কুমোরচক পঞ্চায়েতের সদস্য গোপাল বেরা বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সব ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। মৃৎশিল্পীদের তৈরি মাটির সামগ্রীর চাহিদা না থাকায় ওই শিল্পীদের পরিবারও আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন। মৃৎশিল্পীদের সরকারি সাহায্যের জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছি।’’