গড়বেতার আগরা অঞ্চলে আলু চাষিদের খেত পরিচর্যা। —নিজস্ব চিত্র।
রাজনীতির ‘চক্করে’ পড়তে চান না চাষিরা। তাই ক্ষতি সামলে আলু লাগানোর কাজে নেমে পড়লেন গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোডের চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় সময় নষ্ট না করে খেত থেকে জমা জল বার করে দ্রুত আলু লাগাচ্ছেন চাষিরা। এটাই যে তাঁদের প্রধান
অর্থকরী ফসল!
অকাল বর্ষণে আলু চাষিদের ক্ষতির অন্ত নেই। হাজার হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আলু লাগিয়েছিলেন তাঁরা, ভেবেছিলেন আলু থেকে আয় করে সেই ঋণ শোধ করেও বাকি টাকা সংসারের কাজে লাগাবেন। নিম্নচাপের বৃষ্টি সেই স্বপ্নে জল ঢেলে দেয়। বিঘার পর বিঘা আলু খেত নষ্ট হয়। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তে থাকে আলু বীজের দাম। সাময়িক চিন্তা কাটিয়ে ফের খেত-মুখী হন গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোডের আলু চাষিরা। খেতের জমা জল বার করে পুনরায় জমির পরিচর্যা করে চড়া দামে আলু বীজ কিনে লাগাতে শুরু
করেছেন চাষিরা।
এমন আবহে আলু নিয়ে তরজা বাঁধে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী আলু বীজের কালোবাজারি নিয়ে অভিযোগ তোলেন। পরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে আলু বীজ বিলিও করেন। রাজ্য সরকারও শস্য বিমা যোজনায় ক্ষতিপূরণ দিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করেন। পঞ্চায়েত স্তরে আবেদন নেওয়া শুরু হয়। তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কেরা আলু খেতে নেমে ক্ষতির বহর পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। বামেরাও সরকারের ঘাড়ে দায় ঠেলে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের নিয়ে আন্দোলনে নামার কথা জানিয়েছে। গড়বেতার আগরা অঞ্চলের চাষি সুকুমার মান্না, আশিস সাঁতরা’রা শুক্রবার নিজেদের আলু খেত পরিচর্যা করা থামিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের (চাষি) নিয়ে সকলেই রাজনীতি করে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। অনেক সময় সামান্য ক্ষতিপূরণও মেলে, তাতে কি আর পুরো ক্ষতি সামাল দেওয়া যায়? আমরা রাজনীতির চক্করে পড়তে চাই না। ক্ষতি সামলেই ধার-দেনা করে ফের আলু লাগাচ্ছি।’’
গড়বেতার গড়ঙ্গা অঞ্চলের আলু চাষি সুবোধ দোলই, নিমাই মাইতির মতো প্রান্তিক আলু চাষিরা সরাসরি বলছেন, ‘‘সামনে বড় ভোট আসছে, এখন তো কৃষকদের প্রতি নেতাদের দরদ বাড়বেই। সারা বছর যখন ফসলের ন্যায্য দাম পাই না, জলসেচের অভাবে ধান রোয়ার কাজ করতে পারি না, হাতি এসে যখন সাবাড় করে চলে যায় বিঘার পর বিঘা ফসলের খেত— তখন কারও দেখা মেলে না।’’ আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় চন্দ্রকোনা রোডের নয়াবসত, সাতবাঁকুড়া, শঙ্করকাটা অঞ্চলে জোরকদমে আলু বীজ রোপণের কাজ শুরু করেছেন চাষিরা। ওড়গঞ্জা, সারবেড়া, দামোদরপুর এলাকার কয়েকজন আলু চাষি চন্দ্রকোনা রোডের বাজারে বীজ কিনতে এসে বললেন, ‘‘দাম বেশি দিয়েও আলু বীজ কিনছি, আলু না লাগালে সারা বছর সংসার চলবে কি করে? আলুর আয়ই তো আমাদের মূল রোজগার।’’ তাঁরা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক নেতারা যা পারে বলুক, আমাদের সেই চাষ করেই খেতে হবে!’’
জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলায় এখন ৫০-৫২ শতাংশ আলু লাগানো হয়েছে। তার মধ্যে কিছু চাষের ক্ষতি হয়েছে বৃষ্টির কারণে। আবহাওয়া অনুকূল হতে তাই চাষিদের আলু লাগানোর
ব্যস্ততাও বেড়েছে।’’