মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাটমানি ফেরতের নির্দেশের পরেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা জনরোষের মুখে পড়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরে তেমন কোনও ঘটনা দেখা যায়নি। কাটমানি প্রসঙ্গে অন্য জেলাগুলির তুলনায় প্রথমদিকে কার্যত ‘শান্ত’ই ছিল এই জেলা। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে, জেলায় মাথাচাড়া দিচ্ছে কাটমানি-বিক্ষোভ। সামনাসামনি নয়, তবে শাসকদলের বিরুদ্ধে পড়ছে ব্যানার বা ফ্লেক্স।
ব্যানারগুলিতে তৃণমূলের নেতানেত্রীদের কাটমানি ফেরত দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারও কোলাঘাটের পানশিলা এলাকায় একটি ফ্লেক্স লাগানো হয়েছে। সেখানে সুদ সমেত কাটমানির টাকা ফেরত পেতে আমজনতাকে ‘দিদি ভাইয়ে’র কাছে বা সোজা নবান্নে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিন পানশিলা এলাকায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি ফ্লেক্স দেখতে পান বাসিন্দারা। ‘দুর্নীতি বিরোধী ব্যক্তিবর্গ’ নামে কেউ বা কারা সেটি লাগিয়েছেন। ফ্লেক্সে কোনও নেতার নাম না থাকলেও কোলাঘাট এলাকায় একাধিক সরকারি ও বেসরকারি কাজে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। ফ্লেক্সে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বা অন্য কোনও কাজে কাটমানি দিয়ে যদি কেউ ‘ঠকে’ থাকেন, তাঁদের সেই টাকা ফেরত পেতে নবান্নে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যা এই প্রথম।
ফ্লেক্সে যে অভিযোগ রয়েছে সেগুলি হল, প্রধান মন্ত্রী আবাস যোজনা ও শৌচাগার নির্মাণের টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর, প্রাথমিক স্কুলে চাকরির জন্য কাটমানি নেওয়া, জব কার্ডের টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর, স্থানীয় রামকো সিমেন্ট কারখানা এবং কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়োগ দুর্নীতি ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাটমানি নেওয়া।
এ দিনের ফ্লেক্সের পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রাজকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করতে বিজেপি নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই ধরনের ফ্লেক্স বা ব্যানারগুলি বিজেপির নেতাদের পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া হচ্ছে।’’ উল্লেখ্য, সোমবারই কোলাঘাটের বেশ কয়েকটি এলাকায় রাজকুমার-সহ তিন তৃণমূল নেতার নাম এবং ছবি-সহ কাটমানি-ফ্লেক্স পড়েছিল।
তৃণমূলের দাবি উড়িয়ে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘কাটমানি ফেরতের কথা বিজেপি বলেনি। বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে এই ঘটনায় বিজেপির যোগ কোথায়? পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতারা কাটমানি নিয়ে একটা ভাগ দিয়েছেন অধিকারী পরিবারের হাতে। তার থেকে কাটমানির একটা অংশ গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ভাইপোর কাছে। মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। তাই তাঁরা ফ্লেক্স, ব্যানার লাগাচ্ছেন।’’