সরকারি জায়গা থেকে সরানো হচ্ছে হোর্ডিং। কেশপুরের আমড়াকুচিতে। —নিজস্ব চিত্র।
কমিশনের ‘বজ্র আঁটুনি’ বলে কথা!
দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশনের গুঁতো থেকে বাঁচতে রাজ্য সরকারের প্রচারমূলক যাবতীয় পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, হোর্ডিং খুলে ফেলার কাজ শুরু হল পশ্চিম মেদিনীপুরে।
সরকারি বিভিন্ন এলাকায় থেকে রাজনৈতিক দলের পতাকা- ফেস্টুন খোলার কাজ শুরু করেছেন ফ্লাইং স্কোয়াডের কর্মীরা। জেলাশাসক তথা জেলার নির্বাচন অফিসার জগদীশপ্রসাদ মিনা জানান, কমিশনের নির্দেশ মতো সমস্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। দিন কয়েক আগেও মেদিনীপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় আকছার চোখে পড়ত রাজনৈতিক দলের প্রচার- ফেস্টুন ও পতাকা। রাতারাতি সে সব উধাও।
দিন কয়েক আগে কলকাতায় এসে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী নির্বাচনী বিধি যথাযথ ভাবে পালন না করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকারের প্রচারমূলক যাবতীয় পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, হোর্ডিং খুলে ফেলতে হবে। এ জন্য সময়ও বেঁধে দেন তিনি। গত শুক্রবারই মেদিনীপুরে আসে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নজরদারি দল। দলের নেতৃত্বে ছিলেন পঞ্জাবের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক ভি কে সিংহ। শনিবার তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। যে বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর, ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার সুখেন্দু হীরা প্রমুখ।
বৈঠকে ভি কে সিংহও বুঝিয়ে দেন, কমিশনের নির্দেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। সেই মতো ফ্লাইং স্কোয়াড জেলায় আরও তৎপর হয়েছে বলেই প্রশাসনের এক সূত্রে খবর। জেলা থেকেও ব্লকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারি জায়গায় কোনও প্রচার সরঞ্জাম থাকলে তা দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। রবিবার যেমন কেশপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছে ফ্লাইং স্কোয়াড। কেশপুরের বিভিন্ন রাজ্য সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় থাকা বেশ কিছু পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার খোলা হয়েছে। প্রচারের ফেস্টুন-ব্যানারের অধিকাংশই অবশ্য শাসক দলের। ফ্লাইং স্কোয়াডের এক কর্মী বলেন, “কিছু করার নেই। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ রয়েছে। সেই নির্দেশ মানতেই হবে।” দলের একের পর এক পতাকা- ফেস্টুন খোলা হলেও বিশেষ আপত্তি করেননি শাসক দলের নেতারা। কেশপুরের এক তৃণমূল নেতা বলেন, “এখানে আপত্তির কিছু নেই। থাকতেও পারে না। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে মান্যতা দিতেই হয়। আমরা চাই, সুষ্ঠু ভোট হোক। সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে যা যা পদক্ষেপ করার কমিশন করুক।”
মেদিনীপুর শহরের এলআইসি মোড়, কালেক্টরেট মোড়, কেরানিতলার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরকারের বিভিন্ন প্রচারমূলক হোর্ডিংও এ দিন খুলে ফেলা হয়। এলআইসি মোড়ে যেমন পুরসভার হোর্ডিংয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিল। তেমনই মেদিনীপুর- খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এমকেডিএ) হোর্ডিংয়ে ছিল মা- মাটি- মানুষের সরকারের গুণগান। ইতিমধ্যে এমকেডিএ- র ওই হোর্ডিং খুলে ফেলা হয়েছে। পুরসভার হোর্ডিংও ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
শহরের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা যেমন ধর্মা- কর্ণেলগোলা- গোলকুয়াচক, গোলকুয়াচক- পঞ্চুরচক- কালেক্টরেট, কালেক্টরেট- কেরানিতলা, কেরানিতলা- সার্কিট হাউস রোড, কেরানিতলা- জর্জকোর্ট রোড, কেরানিতলা- বটতলাচক প্রভৃতি রাস্তার আশপাশ থেকে সরকারি জায়গায় থাকা সমস্ত রাজনৈতিক দলের ব্যানার- পতাকা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুরের ফ্লাইং স্কোয়াডের এক কর্মীর কথায়, “মেদিনীপুরে এ বার পর্যবেক্ষকেরা আসতেই থাকবেন। কোথাও ত্রুটি- বিচ্যুতি থাকলেই বিপত্তি! জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ধমক খেতে হতে পারে। তাই যেখানে যা অনিয়ম চোখে পড়েছে দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
অবশ্য শহরে ফ্লাইং স্কোয়াড যতটা তৎপর, শহরতলি কিংবা গ্রামাঞ্চলে ততটা তৎপর নয় বলেই অভিযোগ। গ্রামের দিকে সরকারি জায়গায় এখনও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পতাকা- ফেস্টুন রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সরকারি জায়গা থেকে রাজনৈতিক দলের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, হোর্ডিং খুলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। সবটা করে উঠতে আর কিছু দিন সময় লাগতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব এই কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”