ছত্রধরের বিরুদ্ধে পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলমহলে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে তাঁকেই মুখ করেছে তৃণমূল। দলের সেই রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো সোমবার দুপুরে বঙ্গধ্বনি যাত্রায় গিয়ে বাধার মুখে পড়লেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের জেরে প্রায় ঘন্টা খানেক আটকে থাকলেন জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা।
এ দিন ঝাড়গ্রাম ব্লকের পাটাশিমূল গ্রামে ঢোকার মুখে বাধা পান ছত্রধর। দুপুর দু’টো নাগাদ গ্রামে ঢোকার মুখে একদল লোক প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে ‘খুনি ছত্রধর দূর হটো’ স্লোগান দিতে থাকে। মহিলারা রাস্তায় শুয়ে পড়ে স্লোগান দেন। বিক্ষোভের জেরে তিন জন নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে গাড়িতেই বসে থাকেন ছত্রধর। আলাদা গাড়িতে ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের বন-ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মামনি মুর্মু, ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রেখা সরেন, তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লক সভাপতি নরেন মাহাতো। তাঁরাও বিক্ষোভে আটকে পড়েন।
ছত্রধরের অতীত সামনে এনে গোড়া থেকেই সরব বিরোধীরা। এ দিন বিক্ষোভকারীদেরও অভিযোগ ছিল, এই ছত্রধরই ২০০৯ সালে এলাকায় সভা-মিছিল করে মাওবাদীদের ঢুকিয়েছিলেন। মাওবাদী সন্ত্রাসে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। অনেকের সিঁথির সিঁদুর মুছেছে। মিছিলে না-হাঁটায় মাওবাদী-কমিটির হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন অনেকে। তাই তৃণমূলের অন্য যে কেউ এলে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু ছত্রধরকে তাঁরা ঢুকতে দেবেন না।
পরে এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) অনিন্দ্যসুন্দর ভট্টাচার্য, ঝাড়গ্রাম থানার আইসি পলাশ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিকপাড়া বিট পুলিশ হাউসের ওসি অঞ্জন মাইতির নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে ছত্রধরকে গ্রামে ঢোকার পথ করে দেন। পরে পাটাশিমূলের হুলমাঠে নির্ধারিত জায়গায় বঙ্গধ্বনি যাত্রা করেন ছত্রধর। মিনিট পনেরো ‘দিদির উন্নয়নের খতিয়ান’ পেশ করে চলে যান তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। পরে রেখা, নরেন, মামনিরা গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচি শেষ করেন।
ছত্রধরের অভিযোগ, ‘‘পাটাশিমূল পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। সিপিএমের পুরনো হার্মাদেরা লাল জার্সি ছেড়ে গেরুয়া জার্সি পরেছে। তারাই আমাকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল।’’ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মামনির মতে, ‘‘ছত্রধরদা মাঠে নামতেই ভয় পেয়েছে বিজেপি। বিজেপি শাসিত ওই পঞ্চায়েতের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগগুলি যাতে আমরা জানতে না পারি, সে জন্যই পরিকল্পনা মাফিক রাস্তা আটকেছিল বিজেপির লোকজন।’’
বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর অবশ্য দাবি, ‘‘বিজেপির কেউই ছত্রধরকে আটকাতে যাননি। ছত্রধরকে জঙ্গলমহলের মানুষ ‘সন্ত্রাসের মুখ’ হিসেবেই চেনেন। এটা মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’’