বন্ধ: ফাঁকা কাউন্টার বোগদার উপ-ডাকঘরে। নিজস্ব চিত্র
গত ৭ জুলাই খড়্গপুর আইআইটির একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন কেন্দ্রের শিল্প-বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘‘স্বল্পসঞ্চয় দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। সেখানে ডাকঘরের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই দেশের ডাকঘরগুলির মানোন্নয়ন করা হচ্ছে।’
তারপর পনেরো দিন কাটতে না কাটতেই খড়্গপুর ডাকঘরে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন এক গ্রাহক। বলছেন, “এই ডাকঘরে সঞ্চয় তো আমাদের অভিশাপ।”
বাজ পড়ে কম্পিউটার বিকল হয়ে যাওয়ায় খড়্গপুর ডাকঘর চারদিন ধরে কোনও পরিষেবা মিলছে না। কাউন্টারে ‘লিঙ্ক ফেলিওর’ লেখা দেখে ফিরে যেতে হচ্ছে গ্রাহকদের। গত শনিবার দুপুরে দুর্যোগের সময় এই ডাকঘরের চারটি কম্পিউটার বিকল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ডাকঘরের মূল কম্পিউটারে থাকা মোডেমও পুড়ে যায়। ফলে, বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা তোলা, জমা, নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার মতো যাবতীয় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
গ্রাহকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নানা ব্যাধিতে ধুঁকছে এই ডাকঘর। কারণে-অকারণে কাউন্টারে ‘লিঙ্ক ফেলিওর’ লিখে কর্তৃপক্ষ দায় সারছেন বলে অভিযোগ। রয়েছে কর্মী সঙ্কট। ফলে, পরিষেবা শিকেয় উঠে। দুর্ভোগে পড়ছেন গ্রাহক ও এজেন্টরা।
খড়্গপুরের স্টেশন সংলগ্ন বোগদার এই উপ-ডাকঘর ব্রিটিশ আমলের। সেভিংস, কিষানবিকাশ, এমআইএস, পেনশন মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ অ্যাকাউন্ট রয়েছে এখানে। এই ডাকঘর থেকে ২৩টি ডাকঘরে অর্থ যায়। এ ছাড়া ২০টি শাখা অফিস রয়েছে এই ডাকঘরের অধীনে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ডাকঘরের ভবনও জীর্ণ। বর্ষায় ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। বসার জায়গা নেই। আগে ১৮জন কর্মীকে নিয়ে ৬টি কাউন্টার চালু থাকলেও এখন ৩টি কাউন্টার চলে ১১জন কর্মী দিয়ে। তাই দীর্ঘ লাইনে দুর্ভোগ রোজকার ছবি।
সাঁজোয়ালের বাসিন্দা আশিস মজুমদার বলেন, “এই ডাকঘরে টাকা না থাকলে, কর্মীদের কাজের ইচ্ছে না হলেও বলে লিঙ্ক ফেলিওর। এ বার বাজ পড়ায় বলছে লিঙ্ক ফেলিওর। এত দিন ধরে লিঙ্ক ফেলিওর থাকলেও কেন তা মেরামত করা হচ্ছে না।” আবার তলঝুলির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে কৃষ্ণসামন্তের কথায়, “শ্যালক মারা গিয়েছে। টাকা খুব প্রয়োজন। কিন্তু রোজ ডাকঘরে এসে ফিরে যাচ্ছি। অথচ কারও কোনও হেলদোল নেই।” স্বল্প সঞ্চয় এজেন্ট সংগঠনের খড়্গপুরের সম্পাদক সন্দীপ চক্রবর্তীরও বক্তব্য, “এ ভাবে পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে থাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে।”
কেন সারানো হচ্ছে না কম্পিউটার? ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার আরতি সাঁতরা বলেন, “বাজ পড়ায় তো সব কম্পিউটার অচল হয়েছে। মোডেম বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও মেরামত না হওয়ায় অনেক কাজ জমে যাচ্ছে। পরে তো আমরাও হিমশিম খাব।”
কী বলছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ? ডাকঘরের জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেনডেন্ট নির্মল সরেন বলেন, “আসলে একটি সংস্থার মারফত আমরা বিএসএনএলের ওই মোডেমের পরিষেবা পাই। বাজ পড়ে সেটি বিকল হয়ে গিয়েছে। খুব দ্রুত ওই মোডেম বদল করা হবে।”