খোয়াব গাঁ যাওয়ার রাস্তার বর্তমান অবস্থা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
চলার পথটাই এখন খোয়াব গাঁয়ের লোধা জনজাতির বাসিন্দাদের কাছে খোয়াব!
রাস্তার জটের সমস্যা মেটেনি। পুলিশ লাইনের এলাকা দিয়ে যদিওবা যাতায়াত করছিলেন বাসিন্দারা। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে মেঠোপথটি এখন জলকাদায় থইথই অবস্থা। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন লোধাশিল্পী ষষ্ঠীচরণ আহির বলছেন, ‘‘এক হাঁটু জলকাদায় হাঁটাচলা যাচ্ছে না। গ্রামবাসী কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।’’
ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে এই গ্রামের মাটির বাড়িগুলির দেওয়ালে লোধাশিল্পীদের আঁকা ছবি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন পর্যটকেরা। পর্যটকদের কাছে নিজেদের তৈরি হস্তশিল্পসামগ্রী বিক্রি করে দু’টো পয়সার মুখ দেখেন লোধা শিল্পীরা। করোনা আবহে পর্যটকদের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে দিনমজুরি করেতে এখন ঝাড়গ্রামে যান গ্রামের মকর আহির, পিন্টু আহির, বৃহস্পতি ভুক্তার মতো লোধা শিল্পীরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে যাওয়ার সহজ রাস্তাটাই এখন অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। জমির আল ধরে হেঁটে ঘুরপথে যেতে অনেক সময় লাগছে।’’
ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ওই গ্রামটির আসল নাম লালবাজার। ওই গ্রামের ১৩টি পরিবারের মধ্যে ১২টি পরিবার লোধা সম্প্রদায়ের। এ ছাড়া রয়েছে একটি কুড়মি পরিবার। বছর চারেক আগে গ্রামটিকে দত্তক নিয়ে শিল্পগ্রামে রূপান্তরের কাজ শুরু করেছে কলকাতার ‘চালচিত্র অ্যাকাডেমি’। ওই সংস্থার সম্পাদক শিল্পী মৃণাল মণ্ডল জানাচ্ছেন, সরকারি মানচিত্রে খোয়াব গাঁ যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। শহরের কদমকাননের পিচ রাস্তা থেকে খোয়াব গাঁ যাওয়ার মাটির তিন কিলোমিটার রাস্তার কিছুটা সরকারি জমি, কিছুটা বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র চত্বরের এলাকা আর বাকিটা বনভূমি। কয়েক দশক আগে গ্রামবাসীরাই নিজেদের উদ্যোগে মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করেন। বন দফতর মোরাম দিয়ে সহযোগিতা করেছিল। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের এলাকায় রাস্তা তৈরির অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই রাস্তার প্রায় পাঁচশো মিটার অংশ এখন নতুন জেলা পুলিশ লাইনের চত্বরের মধ্যে চলে আসায় সমস্যার সূত্রপাত। পুলিশ লাইনের এলাকায় পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়েছে। পাঁচিলের একদিকে এখনও দেওয়াল না ওঠায় যাতায়াত করা যাচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ লাইনের এলাকায় হেলিপ্যাড, চারদিকে নিকাশি নালা ও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার জন্য মেঠো রাস্তা আর আগের মতো নেই। মাঝে মাঝে মাটির স্তূপ, উচু নিচু খানাখন্দ। বৃষ্টিতে মেঠোপথ উধাও হয়ে গিয়ে এখন জলকাদায় একাকার অবস্থা। মৃণাল বলছেন, ‘‘খোয়াব গাঁয়ের বিকল্প রাস্তা না হল বাসিন্দাদের রুজি ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ভীষণরকম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এ বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ করুক প্রশাসন।’’
বিধানসভা ভোটের আগে খোয়াব গাঁয়ে সমস্যা খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রেখা সরেন। নির্বাচনী আচরণবিধি ওঠার পরে সমস্যা মেটানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন রেখা। বাসিন্দারা চাইছেন স্থানীয় একটি খালের পাড় বরাবর গ্রামে যাওয়ার বিকল্প রাস্তা হোক। কিন্তু খালটির কিছুটা অংশ পুলিশ লাইনের এলাকার মধ্যে থাকায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।
জেলাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘বিকল্প রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’