আগাছায় ভরা পাঁশকুড়ার ফ্লাড সেন্টার। নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল সত্তরের দশকে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এলাকাবাসীর কথা ভেবে বানিয়েছিল ‘ফ্লাড সেন্টার’। অবশ্য তেমন আর বড়সড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় সময় যত গড়িয়েছে, ওই সেন্টারগুলির গুরুত্ব তত হারিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলি কার্যত পোড়ো বাড়িতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পাঁশকুড়ায় হয়ে যাওয়া ভয়াবহ বন্যায় ওই ফ্লাড সেন্টারগুলি নতুন করে চালুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন এলাকাবাসী। কারণ, এই বন্যার সময়ে দুর্গতদের উঠতে হয়েছে সরকারি স্কুল ভবনে বা অন্য কোনও অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৯৭৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়। সে সময় রূপনারায়ণ নদ এবং কংসাবতী নদীর জলে প্রায় গোটা জেলা প্লাবিত হয়। বহু প্রাণহানি ঘটে। তখন রাজ্যে সদ্য ক্ষমতায় এসেছে বামফ্রন্ট সরকার। বন্যার ভয়াবহতা দেখে তৎকালীন বাম সরকারের পূর্ত দফতর পাঁশকুড়া ব্লকের কেশাপাট, মঙ্গলদ্বারি ও পাঁশকুড়া ব্লক অফিস সংলগ্ন এলাকায় তিনটি আশ্রয় শিবির গড়ে তোলে। সেগুলির নাম দেওয়া হয় ‘ফ্লাড সেন্টার’। দ্বিতল বিশিষ্ট ওই ভবনের প্রত্যেকটিতে অন্তত ৫০০ জন করে আশ্রয় নিতে পারতেন। বাম আমলে একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় ভবনগুলি ব্যবহার করা হত।
বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পাঁশকুড়া এবং কেশাপাটের ফ্লাড সেন্টার দু’টি একটু একটু করে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। কেশাপাটের ফ্লাড সেন্টারটি পঞ্চায়েত অফিসের ঠিক পাশে রয়েছে। সেন্টারটির দোতলার একাধিক পিলার ইতিমধ্যে ভেঙেছে। গোটা ভবনে রয়েছে অসংখ্য ফাটল। পাঁশকুড়া ব্লক অফিস চত্বরে আরেকটি ফ্লাড সেন্টার রয়েছে। আগে ওই ভবনে কয়েকটি সরকারি দফতরের কাজকর্ম হত। ভগ্নদশার কারণে সেখান থেকে সমস্ত দফতর সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রশাসনের তরফে কয়েক বছর আগে দু’টি ফ্লাড সেন্টারকেই বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু মঙ্গলদ্বারির ফ্লাড সেন্টারটি এখনও ব্যহারের উপযুক্ত অবস্থায় রয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর পাঁশকুড়ায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। তেমন পোক্ত এবং নির্দিষ্ট সরকারি ত্রাণ শিবির না থাকায় দুর্গতার বিভিন্ন স্কুল, ক্লাব, রাস্তায় ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। একাংশ আবার বাধ্য হয়ে মঙ্গলদ্বারির ফ্লাড সেন্টারে যান। সেখানে এখনও অনেকে রয়েছেন। পাঁশকুড়ার খন্ডখোলা, রঘুনাথবাড়ি, কোলাঘাটের দেড়িয়াচক, ভোগপুর ইত্যাদি এলাকায় এখনও বন্যার জল জমে রয়েছে। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদে স্থানীয় সরকারি স্কুলে রাখা হয়েছে। এর ফলে স্কুলগুলির পঠনপাঠনও ব্যাহত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রসঙ্গে স্থানীয়দের বক্তব্য, নষ্ট হয়ে যাওয়া ফ্লাড সেন্টারগুলি চালু থাকলে স্কুলে ত্রাণ শিবির করতে হত না।
মঙ্গলদ্বারির বাসিন্দা অসীম কুমার সামন্ত বলেন, ‘‘বন্যার সময় মঙ্গলদ্বারি ফ্লাড সেন্টারটি খুব কাজে লেগেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ফ্লাড সেন্টারের গুরুত্ব অপরিসীম। পাঁশকুড়া এবং কোলাঘাটের ফ্লাড সেন্টার দু’টি নতুন রূপে গড়ে তোলা উচিত। হোক।’’
এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করছে প্রশাসন। পাঁশকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পম্পা সাঁতরা রাউত বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া এবং কেশাপাটের জীর্ণ ফ্লাড সেন্টার দুটি শীঘ্রই ভেঙে নতুন করে বানানো হবে।’’