এই আমন্ত্রণপত্র নিয়েই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
পাথর তোলা ও পরিবহণ বন্ধ করেছে প্রশাসন। অথচ অভিযোগ, এরপরও তৃণমূল নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পাথর ব্যবসায়ীদের নতুন সংগঠন গ়ড়ে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সামনে অবশ্য রাখা হচ্ছে ‘শ্রমিক স্বার্থ’কে।
আগামী বুধবার বেলপাহাড়ি ব্লক কমিউনিটি হলে পাথর ব্যবসায়ীদের নতুন সমিতি গঠনের জন্য একটি সভা ডাকা হয়েছে। রীতিমতো আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে পাথর ব্যবসায়ীদের সেই সভায় উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে। আমন্ত্রণপত্রে জানানো হয়েছে, এলাকায় পাথর ব্যবসার অনুমতি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে। সভার মূল বক্তা হিসেবে নাম ছাপা হয়েছে তৃণমূলের বেলপাহাড়ি ব্লক সভাপতি চিন্ময় মাহাতো ও বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী রাহালা হাঁসদার। প্রকাশ্যে শাসক দলের দুই নেতা- নেত্রী অবশ্য সভা ডাকার কথা অস্বীকার করেছেন। চিন্ময়ের বক্তব্য, আমি কোনও সভা ডাকিনি। বিষয়টা আমার অগোচরে হয়েছে।” আর রাহালার মন্তব্য, ‘‘আসলে সভা তো আমি ডাকিনি। তাই ঠিক বলতে পারব না।” তাহলে ব্লকের কমিউনিটি হলে কী ভাবে সভার আয়োজন হচ্ছে? সদুত্তর মেলেনি।
পাথর ব্যবসায়ীদের সংগঠন গড়া হবে। ব্যবসার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে তদ্বির গড়া হবে। এ ক্ষেত্রে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকা কী? আইএনটিটিইউসির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি গৌরাঙ্গ প্রধান বলেন, ‘‘ওই সভা করতে নিষেধ করেছি। আইএনটিটিইউসির ব্যানারে তো করা যাবেই না। এর সঙ্গে শ্রমিকের কোনও স্বার্থ নেই।’’ প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার থেকে বেলপাহাড়ি বিডিও অফিস চত্বরে লাগাতার অনশনে বসেছিলেন অরাজনৈতিক সংগঠন বেলপাহাড়ি পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যেরা। তাঁরাও সামনে রেখেছিলেন ‘শ্রমিক স্বার্থ’কে। ওই সংগঠনের বক্তব্য ছিল, বেলপাহাড়ি ব্লকের প্রায় হাজার পাঁচেক বাসিন্দা হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভাঙার শ্রমিকের কাজ করেন। প্রশাসন পাথর উত্তোলন ও পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রায় মাস আটেক তাঁরা কর্মহীন হয়ে গিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, শ্রমিকেরাও যোগ দেবেন অনশনে। কিন্তু বাস্তবে, কয়েকজন প্রতিনিধি ছাড়া আর কোনও প্রতিনিধিকে ওই অনশন মঞ্চে দেখা যায়নি।
শনিবার ব্যবসায়ীদের অনশন ভাঙাতে উদ্যোগী হন রাহালা ও চিন্ময়। প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন শাসকদলের দুই নেতা-নেত্রী। ওই দিনই পাথর ব্যবসায়ীরা অনশন তুলে নেন। এরপরই শাসকদলের উদ্যোগে পাথর ব্যবসায়ী সংগঠন গড়ার উদ্যোগকে ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে। পাথর ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের সংগঠনটি অরাজনৈতিক। এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম আমাদের সমস্যা নিয়ে শাসকদলের নেতা-জনপ্রতিনিধিরা ভাববেন। কিন্তু উল্টে ওরা সংগঠন গড়ে মনে হচ্ছে পাথর ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন।’’
আগে ভূমি দফতরের অনুমতি নিয়ে রায়তি জমি থেকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে ম্যাঙ্গানিজ আকর, কোয়ার্জাইট-সহ মূল্যবান পাথর উত্তোলন ও পরিবহন করা যেত। এখন আইন বদল করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। বিষয়টি রাজ্য মন্ত্রিসভার বিবেচনাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হল পাথর-রাজনীতি।