আকাশ মুর্মু।
ওঁদের কারও বয়স উনিশ, কারও একুশ, কারও চব্বিশ, কারও বা সাতাশ। পুরভোটে এ বারই প্রথম প্রার্থী। কেউ রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক সূত্রে বা পরিচিতদের দেখে। কেউ ছাত্র সংগঠন করার সুবাদে দলের নীতি-আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে। দল আলাদা, মত আলাদা। তবে একটা ক্ষেত্রে ওঁরা সকলেই একমত। সব দলের তরুণ প্রার্থীরাই মনে করেন, রাজনীতি মানেই দুর্নীতি, এটা ঠিক নয়। এই ধারণা দূর করতে হবে। পুর-পরিষেবার ভাবনাতেও নতুনের ছোঁয়া আনতে হবে। গতানুগতিক কাজের বাইরে গিয়ে নতুন করে কিছু ভাবতে হবে। তবেই শহর আরও একটু আধুনিক হবে।
খড়্গপুর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআইয়ের প্রার্থী হয়েছেন শর্মিষ্ঠা সিংহ। বছর উনিশের শর্মিষ্ঠা মকরামপুরের ডিএড কলেজের ছাত্রী। তাঁর পিসি লিপিকা বাগদি শহরের বিদায়ী কাউন্সিলর। এ বার পুরভোটে লিপিকাদেবী প্রার্থী হননি। বদলে প্রার্থী হয়েছেন শর্মিষ্ঠা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার নিজের এলাকা চষে ফেলেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটপ্রার্থনা করেছেন। এলাকার সমস্যার কথা শুনেছেন। এই তরুণ প্রার্থী বলছিলেন, “কিছু রাস্তার কাজ বাকি রয়েছে। নিকাশির কিছু সমস্যা রয়েছে। জিতলে এই সমস্যাগুলোরই আগে সমাধান করব।” তাঁর কথায়, “পিসি কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি যতটা সম্ভব করার চেষ্টা করেছেন। তবে এলাকা বাড়ছে। ফলে, সমস্যাও বাড়ছে।” রেলশহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন সুস্মিতা পাত্র। বছর একুশের সুস্মিতা খড়্গপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ভোটপ্রচারে বেরিয়ে তিনিও বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। মানুষের কাছ থেকে সমস্যার কথা শুনেছেন। সুস্মিতা বলছিলেন, “এলাকার বেশ কিছু রাস্তা সংস্কার করা দরকার। তবে জিতলে সবার আগে জল সমস্যার সমাধান করতে চাই। গরম পড়তে না পড়তেই কিছু এলাকায় জলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মানুষ জলই পাচ্ছেন না।” অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে বামেদের রোখা যাবে না জানিয়ে তরুণ প্রার্থীর মন্তব্য, “মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন।” পরশু, শনিবার ভোট-পরীক্ষার আগে আজ, বৃহস্পতিবার কলেজের পরীক্ষায় বসবেন সুস্মিতা।
রেলশহরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন আশিস হেমব্রম। পরিবার কংগ্রেস সমর্থক। এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর তপন বসুর হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা। পড়াশোনা মুক্ত বিদ্যালয় থেকে। আশিস বলছিলেন, “মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। সেই জন্যই সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছি।” দলের নেতা-কর্মীরা তো রয়েছেনই, প্রচারে বন্ধুদেরও সঙ্গে রাখছেন এই তরুণ। বছর চব্বিশের আশিসের কথায়, “এই সময়ের মধ্যে অনেক কাজই হয়েছে। তবে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। জিতলে এলাকায় জলের সমস্যা মেটানোর সব রকম চেষ্টা করব। বিদ্যুতের সমস্যারও সমাধান করব।” চন্দ্রকোনার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন সুস্মিত পাল। বছর সাতাশের সুস্মিত এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। স্নাতক হয়েছেন মেদিনীপুর কলেজ থেকে। কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংগঠন করার সুবাদেই দলের নীতি-আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। দীর্ঘদিন পর চন্দ্রকোনার এই এলাকায় দলের প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। গত কয়েকটি পুর-নির্বাচনে তারা নির্দলকেই সমর্থন করে এসেছিল। সুস্মিত বলছিলেন, “মানুষ সঙ্গে আছেন। প্রচারে সাড়াও মিলছে। এলাকায় নিকাশি, আবর্জনার সমস্যা রয়েছে। বস্তি এলাকার উন্নয়ন হয়নি। জিতলে আগে এই সব সমস্যারই সমাধান করব।” তাঁর কথায়, “বামফ্রন্ট সরকার যখন ছিল, তখন কোনটা করতে পেরেছে, কোনটা করতে পারেনি, তা বলত। সব হয়ে গিয়েছে, এমনটা কখনও দাবি করেনি। সরকারের যেমন সাফল্য ছিল, তেমন কিছু ব্যর্থতাও ছিল। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বলছেন, সব কাজ হয়ে গিয়েছে। মানেটা কী!”
শহর-এলাকায় বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। রাস্তাঘাট নিয়মিত সাফাই হয় না। পথবাতি কম। পানীয় জলও সর্বত্র সরবরাহ হয় না। এই সব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশিই চান, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে। বস্তি এলাকার দুঃস্থ শিশুদের লেখাপড়া শেখাতে। বস্তির ঘরে ঘরে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিতে। নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে। এক তরুণ প্রার্থীর কথায়, “ইদানীং নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। মেয়েরা রাস্তায় বেরিয়ে সেই ভাবে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। কোথাও একটা ভয় কাজ করছে। কিন্তু, কোনও মেয়েই কী ভয়ে নিয়ে ঘরে বসে থাকতে চায়? সকলেই চায় পড়াশোনার পর কাজ করতে।” তাঁর কথায়, “নারী নিরাপত্তা বাড়াতে হলে দরকার তাদের শিক্ষা, কাজ। জিতলে এ ক্ষেত্রে যতটুকু পারব, করব।” দিন বদলেছে। বদলেছে প্রচার কৌশলও। অল্পবয়সীদের অনেকেই এখন দিনের বেশিরভাগ সময় ফেসবুক-হোয়াট্সঅ্যাপে ডুবে থাকেন। তরুণ প্রার্থীরা তাই সোশ্যাল সাইটেও প্রচার চালাচ্ছেন।
কে কী দল করেন, প্রচারে বেরিয়ে তা দেখছেন না তরুণ প্রার্থীরা। প্রত্যেকেই মানুষের কাছে যাচ্ছেন। পরিচিত হচ্ছেন। মানুষের মন পেতে তাঁদের কথা মন দিয়ে শুনছেন। তরুণ প্রার্থীদের উপলব্ধি, মানুষের জন্য সকলে মিলে কাজ করতে হবে। সেখানে শাসক-বিরোধী দু’তরফেরই উদ্যোগটা জরুরি। পুর- পরিষেবার ভাবনায় নতুনের ছোঁয়া আনতে হবে। তাঁদের বার্তা, এলাকার উন্নয়নে রাজনীতি কখনও বাধা হতে পারে না।