Soumen Mahapatra

রোগী কল্যাণে ‘পুনর্বাসন’ সৌমেনের, প্রশ্নে রাজনীতিও

তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে সৌমেনের স্থান পাওয়া তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৫
Share:

তমলুকের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। —ফাইল চিত্র।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তমলুকের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। কিন্তু এ বার চাকা ঘুরছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

কারণ, ২ ডিসেম্বর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর বিভিন্ন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সরকার মনোনীত জন প্রতিনিধিদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে নাম রয়েছে সৌমেনের। তিনি তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সমিতির সরকার মনোনীত জনপ্রতিনিধি মনোনীত হয়েছেন। ফলে এত দিন পর সৌমেন ফের তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সুনজরে পড়েছেন এবং তাঁর রাজনৈতিক পুনর্বাসন হচ্ছে বলে অনেকের অভিমত।

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় টানা তিন বার ঠাঁই পাওয়া সৌমেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক রাজনীতিতে কয়েক বছর ধরেই দাপট দেখিয়েছিলেন। কিন্তু গত ২০২২ সালের শেষ দিকে তাঁকে প্রথমে মন্ত্রিসভা সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। এর পর তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন সৌমেন। সেই পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

পরিষদীয় রাজনীতি ও দলে প্রায় কোণঠাসা হয়ে পড়া সৌমেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছিল। তবে এমন অবস্থাতেও সৌমেন দল বা দলনেত্রীর বিরুদ্ধে কোনওরকম ক্ষোভ প্রকাশের পথে হাঁটেননি। যদিও সৌমেন মহাপাত্রের স্ত্রী সুমনা মহাপাত্র সম্প্রতি পাঁশকুড়া শহর তৃণমূল সভানেত্রীর পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন। এর পর তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে সৌমেনের স্থান পাওয়া তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল।

দলের একাংশের মতে, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় দলের ফল খুব একটা ভাল হয়নি। লোকসভা ভোটে জেলার তমলুক ও কাঁথি, দুই লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলকে হারিয়ে বিজেপির জয়ে শাসক দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাই ধরা পড়েছে। এমন অবস্থায় আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে সৌমেনের মতো পোড় খাওয়া নেতাকে ফের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে।

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিগুলিকে রাজনীতিমুক্ত রাখার বার্তা দিয়ে সমিতি ভেঙে দিয়েছিলেন। হাসপাতালের সুপার বা অধ্যক্ষদের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে রেখে নতুন করে সমিতি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকারের মনোনীত জনপ্রতিনিধিদের সদস্য হিসেবে রোগী কল্যাণ সমিতিতে স্থান দেওয়ার ফলে সমিতি আদতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হল না বলে মনে করা হচ্ছে।

যেমন, সৌমেন মহাপাত্র একসময়ে তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। এখন বিধায়কের উপস্থিতিতে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে ওই মেডিক্যাল কলেজের ধ্যক্ষ কতটা স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যের সর্বত্র হাসপাতালগুলিতে একই পরিস্থিতি হবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

যদিও সৌমেনের দাবি,‘‘রোগী কল্যাণ সমিতিতে সার্বিকভাবে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।আমি সদস্য হিসেবে আমার মতামত জানাব। তা গৃহীত হতে পারে বা না-ও হতে পারে। চেয়ারম্যান স্বাধীনভাবেই তাঁর কাজ করবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement