(বাঁ দিকে) অমিত শাহ। সিভি আনন্দ বোস। (ডান দিকে) —ফাইল চিত্র।
ওয়াকফ সংশোধিত আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অশান্তি ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকায়। জঙ্গিপুর, ধুলিয়ান, সুতি, শমসেরগঞ্জের মতো এলাকায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মোতায়েন করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এমতাবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস চিঠি পাঠালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। রাজভবন সূত্রে খবর, শনিবার রাজ্যপালের নির্দেশে তাঁর দফতর থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্ত্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় যে সব ঘটনা ঘটেছে, সেই সমস্ত ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিবকে ওই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। রাজভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুর্শিদাবাদে ঘটে চলা ঘটনা প্রসঙ্গে গত কয়েক দিন ধরেই নানা বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন রাজ্যপাল স্বয়ং। শুক্রবার এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বিশদে আলোচনা হয়েছে তাঁর। তার পরেই যাবতীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজভবন থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে।
রাজভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই চিঠিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তিনি মুর্শিদাবাদের শান্তি ফেরানোর কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর যে বিস্তারিত কথা হয়েছে, সেই বিষয়টিও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গত কয়েক দিনের ঘটনাক্রম প্রসঙ্গে তিনি যে সমস্ত তথ্য পেয়েছেন, সেই বিষয়েও বিশদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়েছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, যে দিন তিনি এই চিঠিটি পাঠিয়েছেন, সেই দিনই দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তবে রাজভবনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, যেহেতু সাংবিধানিক ভাবে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হলেন রাজ্যপাল, তাই পশ্চিমবঙ্গের কোনও এলাকায় উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটলে তাতে পদক্ষেপ করতেই হয় রাজভবনকে। সেই নিয়ম মেনেই তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে নিজের অভিমত জানিয়েছেন।
রাজভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নানা বিষয়ে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের মতপার্থক্য থাকলেও মুর্শিদাবাদে দ্রুত শান্তি ফেরাতে প্রয়োজনে পদক্ষেপ করার বিষয়ে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী একমত। তবে শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতির পর আনন্দ বোসের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো চিঠির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতিটিও নজরে রেখেছিল রাজভবন। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে নিয়মিত নবান্নের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বলেই পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে খবর। তেমন পরিস্থিতিতে রাজভবনের শাহের মন্ত্রকে চিঠি লেখার পর ঘটনার গতিপ্রকৃতি কোন দিকে মোড় নেয়, সে দিকেই নজর প্রশাসনের একাংশের। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় সংঘর্ষের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৫০ জনেরও বেশি গ্রেফতার করা হয়েছে। বেসরকারি সূত্রে খবর, অশান্তির জেরে চার জন প্রাণ হারিয়েছেন।